২০২৬ সালের রুশ ফেডারেল বাজেট: সামরিকীকরণে অগ্রাধিকার, নাগরিকের ওপর করের বোঝা

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৬ সাল এবং পরবর্তী তিন বছরের জন্য প্রযোজ্য ফেডারেল বাজেট আইনে স্বাক্ষর করেছেন, যা নভেম্বরের শেষ দিকে সম্পন্ন হয়েছে। এই আইনটি রাশিয়ার অর্থনীতিকে গভীরভাবে যুদ্ধকালীন কাঠামোতে চালিত করার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সামাজিক ও জাতীয় অর্থনীতির সহায়তায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস টানা হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক বিন্যাস মূলত তেল ও গ্যাসের রাজস্ব হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটছে, যা এই বছর ২০ শতাংশ কমেছে এবং আগামী বছরগুলিতেও উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম।

২০২৬ সালের জন্য মোট ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে ৪৪.০৬ ট্রিলিয়ন রুবল, যেখানে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ১.৬ শতাংশ বা ৩.৭৮ ট্রিলিয়ন রুবল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বাজেটের একটি বিশাল অংশ, ১৬.৮৪ ট্রিলিয়ন রুবল, যা মোট ব্যয়ের ৩৮ শতাংশ, সেনাবাহিনী এবং 'জাতীয় নিরাপত্তা' খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ৩৮ শতাংশের বরাদ্দ ২০০২১ সালের প্রাক-যুদ্ধ অবস্থার ২৪ শতাংশের তুলনায় ১.৬ গুণ বেশি, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ স্তর নির্দেশ করে।

সামরিক খাতে এই বিপুল বিনিয়োগের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ কল্যাণের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক ব্যয়ের অংশ হ্রাস পেয়ে ২৫.১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা প্রাক-যুদ্ধকালীন ৩৮.১ শতাংশ থেকে কম। একইভাবে, জাতীয় অর্থনীতি সহায়তার জন্য বরাদ্দ কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৯ শতাংশে, যা পূর্ববর্তী ১৭.৬ শতাংশের তুলনায় কম। রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার এই দুটি অংশই সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে এবং সামরিক ব্যয় মেটাতে সরকার নতুন কর ব্যবস্থা চালু করছে, যা যুদ্ধের খরচ সরাসরি সমাজের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর মধ্যে প্রধান হলো মূল্য সংযোজন কর (VAT) ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করা, যা থেকে ১.২ ট্রিলিয়ন রুবল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। সমস্ত নতুন কর ব্যবস্থা থেকে মোট ২.৬ ট্রিলিয়ন রুবল আদায়ের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য সরলীকৃত কর ব্যবস্থা বাতিল করা হচ্ছে, যা ছোট উদ্যোগগুলির পরিচালনায় জটিলতা সৃষ্টি করছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বাজেট রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের অগ্রাধিকারগুলির একটি কাঠামোগত পরিবর্তনকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদী সামরিক উদ্দেশ্যের দিকে নির্দেশ করে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন ২০২৬ সালে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ১.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন, এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে মূলত সামরিকীকরণের ওপর ভিত্তি করে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইআইএসএস (IISS) জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় ইউরোপের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেটকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই আইনটি স্পষ্ট করে যে দেশের সম্পদ বেসামরিক খাত থেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, যা সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করবে।

উৎসসমূহ

  • ČT24 - Nejdůvěryhodnější zpravodajský web v ČR - Česká televize

  • ČT24

  • EuroZprávy.cz

  • Novinky.cz

  • Notizie.it

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।