মহাকাশে ভারতীয় খাবার: শুভাংশু শুক্লার জিরো-জি ডাইনিং অভিজ্ঞতা

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) মহাকাশচারীদের খাবার গ্রহণ এক বিশেষ অভিজ্ঞতা, যা পৃথিবীর সাধারণ জীবনযাত্রা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা সম্প্রতি তাঁর মহাকাশ যাত্রার সময়কার এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ওজনহীন পরিবেশে খাবার এবং পানীয় পরিচালনা করতে হয়। শুক্লা তাঁর একটি ভিডিওতে বলেছেন, “মহাকাশে খাবার। আমি কখনো ভাবিনি যে আমাকে আবার খেতে শিখতে হবে। এখানে আমি ব্যাখ্যা করছি কেন মহাকাশে খাওয়ার সময় অভ্যাসের গুরুত্ব রয়েছে। আপনি যদি মনোযোগী না হন তবে আপনি সহজেই একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারেন এবং আপনি সেই ব্যক্তি হতে চান না। মহাকাশে যেকোনো কিছুর জন্য একটি শক্তিশালী মন্ত্র হল ‘ধীর মানে দ্রুত’।”

মহাকাশে খাবার গ্রহণের এই নতুন পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর মতো এখানে খাবার প্লেটে স্থির থাকে না; সামান্য অসাবধানতাতেও খাবার বা পানীয় ভেসে যেতে পারে, যা সরঞ্জামের ক্ষতি করতে পারে বা সহযাত্রীদের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণেই শুক্লা ‘ধীর মানে দ্রুত’ এই নীতি অনুসরণ করার উপর জোর দিয়েছেন, যা প্রতিটি কাজ সতর্কতার সাথে করার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। সবকিছু ভেলক্রো এবং টেপ দিয়ে আটকানো থাকে যাতে ভেসে না যায়।

শুক্লা আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য প্রকাশ করেছেন যে, মানুষের হজম প্রক্রিয়ার জন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “অন্য একটি মজার তথ্য হল, খাবার হজম করার জন্য আমাদের মাধ্যাকর্ষণের প্রয়োজন নেই। পেরিস্টালসিস নামক একটি প্রক্রিয়া হজমের জন্য দায়ী, যা মাধ্যাকর্ষণ-নিরপেক্ষ। এটি পেশীগুলির সংকোচন এবং প্রসারণ যা খাদ্যকে পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে ঠেলে নিয়ে যায়। মাথা উপরে বা নিচে, মাধ্যাকর্ষণ থাকুক বা না থাকুক, আপনার শরীর সবসময় খাবার হজম করবে।” এই পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়াটি মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে যেমন পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে, তেমনই মহাকাশেও কার্যকরভাবে কাজ করে।

শুক্লা তাঁর মহাকাশ যাত্রায় ভারতীয় সুস্বাদু খাবার, যেমন গাজর কা হালুয়া এবং মুগ ডাল কা হালুয়া নিয়ে গিয়েছিলেন, যা তিনি তাঁর সহ-মহাকাশচারীদের সাথে ভাগ করে নিয়েছিলেন। এই খাবারগুলি বিশেষভাবে মহাকাশ মিশনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রায় ১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে এবং এগুলি প্রিজারভেটিভ-মুক্ত। তাঁর এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অংশ পৌঁছে দিয়েছে। মহাকাশে খাবার কেবল একটি পুষ্টির উৎস নয়, এটি মহাকাশচারীদের মধ্যে একতা, সংস্কৃতি এবং ভাগ করা মানব অভিজ্ঞতার প্রতীক। শুক্লার এই অভিজ্ঞতা কেবল ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধানের অগ্রগতিকেই তুলে ধরে না, বরং এটি ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎসও বটে। তিনি দেখিয়েছেন যে, প্রতিকূল পরিবেশেও সঠিক মানসিকতা এবং অভ্যাসের মাধ্যমে যেকোনো কাজকে একটি বৈজ্ঞানিক অ্যাডভেঞ্চারে পরিণত করা সম্ভব।

উৎসসমূহ

  • MoneyControl

  • India Today

  • India Today

  • Mint

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।