নাসার গ্রহ বিজ্ঞানী কর্তৃক বেথেলহেমের তারার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ধূমকেতুর প্রস্তাবনা

সম্পাদনা করেছেন: Uliana S.

বাইবেলে বর্ণিত ‘বেথেলহেমের তারা’ নামক ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনাটির একটি নতুন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া গেছে নাসা-র একজন গ্রহ বিজ্ঞানীর গবেষণার মাধ্যমে। মথি লিখিত সুসমাচারে বর্ণিত এই রহস্যময় ঘটনাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বহু বছর ধরে ভাবিয়ে তুলেছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে কোনো পরিচিত তারা বা গ্রহই একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর ওপর স্থির থাকতে পারে না। এর আগে গ্রহের সংযোগ বা অতি নবতারা (সুপারনোভা) বিস্ফোরণের মতো তত্ত্বগুলি প্রস্তাব করা হলেও, ‘এক জায়গায় স্থির থাকার’ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি কোনোটিই সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

প্রস্তাবিত ব্যাখ্যাটি হান রাজবংশের প্রাচীন চীনা নথিতে লিপিবদ্ধ একটি ধূমকেতুর ওপর আলোকপাত করে, যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ অব্দে দৃশ্যমান হয়েছিল। সেই সময়ে এই মহাজাগতিক বস্তুকে ‘ঝাঁটা তারা’ (Broom Star) নামে অভিহিত করা হতো। এই জ্যোতিষ্কটি আকাশে টানা ৭০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দৃশ্যমান ছিল। নাসা-র জনসন স্পেস সেন্টারের গ্রহ বিজ্ঞানী মার্ক ম্যাটনি এবং স্পেস ডেবরিস প্রোগ্রামের মডেলিং বিভাগের প্রধান তাঁর এই গবেষণাটি ‘জার্নাল অফ দ্য ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’-তে ২০২৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রকাশ করেন। ম্যাটনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই ধূমকেতুটিই প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রার্থী, যার দৃশ্যমান গতিপথ মথি লিখিত সুসমাচারের বর্ণনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়।

এই তত্ত্বের মূল গণনা নির্ভর করে খ্রিস্টপূর্ব ৫ সালের জুনে পৃথিবীর সঙ্গে ধূমকেতুটির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংযোগের ওপর। হিসাব অনুযায়ী, এই সংযোগটি চাঁদের দূরত্বের সমতুল্য, অর্থাৎ প্রায় ৩,৯০,০০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ঘটে থাকতে পারে। চীনা পর্যবেক্ষণগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কক্ষপথের মডেলিং দেখায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৫ সালের ৭ জুন স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১০টার দিকে ধূমকেুটি ‘ট্রানজিয়েন্ট জিওসিনক্রোনাস মোশন’ প্রদর্শন করেছিল। এই মুহূর্তে বস্তুটির গতি পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিকে প্রায় পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিল, যার ফলে বেথেলহেমের ওপর ধূমকেুটি যেন ‘দাঁড়িয়ে আছে’ এমন একটি বিভ্রম সৃষ্টি হয়েছিল।

ম্যাটনি উল্লেখ করেছেন যে, এই অস্বাভাবিক গতি সম্ভবত দিনের বেলায়ও দেখা গিয়েছিল, যখন প্রাচীন মানুষেরা সাধারণত ভ্রমণ করত। এটি জেরুজালেম থেকে দক্ষিণে বেথেলহেমে যাত্রা করা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য একটি পথপ্রদর্শক তারার মতো কাজ করে থাকতে পারে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, এই ঘটনাটি যিশুর জন্মের প্রচলিত সময়কালের সঙ্গে মিলে যায়, যা ঐতিহাসিকরা সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ৬ থেকে ৫ অব্দের মধ্যে রাখেন। কারণ, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজা হেরোদ দ্য গ্রেট খ্রিস্টপূর্ব ৪ অব্দে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

চীনা নথিপত্র, বিশেষত ‘বুক অফ হান’-এর ২৬তম খণ্ডে থাকা ‘অ্যাস্ট্রোনমি ট্র্যাক্ট্যাট’, নির্দেশ করে যে ধূমকেুটি জিয়ানপিং যুগের দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসে আবির্ভূত হয়েছিল, যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ সালের ৯ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে পড়ে। বস্তুটি ৭০ দিনের বেশি সময় ধরে দৃশ্যমান থাকার বিষয়টি এর ব্যতিক্রমী উজ্জ্বলতার প্রমাণ দেয়। প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রে, রাজাদের জন্ম বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পূর্বাভাস হিসেবে ধূমকেতুকে প্রায়শই দেখা হতো, যা জ্যোতিষী জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে এই ঘটনাটিকে একটি শক্তিশালী চিহ্ন করে তুলেছিল।

মার্ক ম্যাটনির এই গবেষণা ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগত অগ্রগতি এনেছে, কারণ এটি প্রাচীন পর্যবেক্ষণগুলিকে মডেল করার জন্য আধুনিক গণনামূলক কৌশল ব্যবহার করে। এই তত্ত্বের প্রধান শক্তি হলো— এটি পর্যবেক্ষণের সেই নির্দিষ্ট, অস্বাভাবিক বিবরণটিকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছে, যা পূর্ববর্তী মডেলগুলি সমাধান করতে পারেনি, অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে গতির স্থবিরতা। তবে, এই বিশ্লেষণটি প্রাচীন চীনা পাঠ্যের ব্যাখ্যা এবং কক্ষপথের পুনর্গঠনের নির্ভুলতার ওপর নির্ভরশীল। এই প্রসঙ্গে, জ্যোতির্পদার্থবিদ ক্রিশ্চিয়ান থাইস ম্যানহাইম প্ল্যানেটারিয়ামে ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বেথেলহেমের তারা’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এই প্রার্থী যতই বিশ্বাসযোগ্য হোক না কেন, গবেষণাপত্রে জোর দেওয়া হয়েছে যে, যেহেতু এটি ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল, তাই চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব।

তা সত্ত্বেও, ম্যাটনির কাজটি সুসমাচারের বর্ণনার প্রতিটি দিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাটি উপস্থাপন করে। গবেষণাপত্রে ভবিষ্যতের একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকও ইঙ্গিত করা হয়েছে: আশা করা হচ্ছে যে, ধূমকেুটি ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারী সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানে ফিরে আসবে, যখন পৃথিবী সূর্য এবং এই বিশাল গ্রহটির মাঝখানে থাকবে, যা একটি উল্লেখযোগ্য আলোক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, এই ঘটনার গুরুত্ব চূড়ান্ত ঐতিহাসিক নিশ্চিতকরণের চেয়েও জ্যোতির্বিজ্ঞানের রহস্য সমাধানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

8 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • newsbomb.gr

  • Merkur.de

  • Forbes

  • EarthSky

  • In-The-Sky.org

  • BBC Sky at Night Magazine

  • Live Science

  • Bible bombshell as NASA scientist proposes what Star of Bethlehem really was

  • Could Ancient Chinese Observations Reveal the Star of Bethlehem?

  • 2000-year mystery cracked? NASA scientist says he's finally uncovered the true identity of the star of Bethlehem

  • Bios | Mark Matney - NASA • ARES

  • Stern von Bethlehem aus astronomischer Sicht - Planetarium Mannheim

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

নাসার গ্রহ বিজ্ঞানী কর্তৃক বেথেলহেমের তারা... | Gaya One