বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ হওয়ার দাবিদার চিলির আলেসে মিলেনারিও, যা মথুশলাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে

সম্পাদনা করেছেন: An goldy

Methuselah

পৃথিবীর প্রাচীনতম অ-ক্লোনাল গাছের খেতাব নিয়ে প্রতিযোগিতা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে এখন চিলির আলেসে কোস্টেরো ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত আলেসে মিলেনারিও, যা স্থানীয়ভাবে ‘গ্রান আবুয়েলো’ নামে পরিচিত। প্যারিসের জলবায়ু ও পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষণাগারের বিজ্ঞানী জোনাথন বারিচিভিচ একটি নতুন মূল্যায়ন করেছেন। তিনি পরিসংখ্যানগত মডেলিং এবং প্রচলিত পদ্ধতির সমন্বয়ে এই প্যাটাগোনিয়ান সাইপ্রেস (*Fitzroya cupressoides*) গাছটির বয়স ৫,৪৮৪ বছর বলে অনুমান করেছেন। এই অনুমান যদি সঠিক প্রমাণিত হয়, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মথুশলা গাছের নিশ্চিত বয়সের চেয়ে কয়েক শতাব্দী বেশি হবে।

প্রপিতামহ

প্রায় ২৮ মিটার উঁচু এই প্রাচীন গাছটি জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যের এক অমূল্য ভান্ডার। তবে এর সঠিক বয়স নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ এর কেন্দ্রভাগ পচে যাওয়ায় সম্পূর্ণ বলয় গণনা করা অসম্ভব। ২০২০ সালে, মহামারী শুরু হওয়ার ঠিক আগে, বারিচিভিচ এবং চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তোনিও লারা একটি কোর নমুনা সংগ্রহ করেন, যেখানে প্রায় ২৪০০ বলয় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ড্রিলিং যন্ত্রটি গাছের একেবারে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। এই সম্ভাব্য আবিষ্কারের পর চিলির কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাড়া দেয়। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে, ন্যাশনাল ফরেস্ট কর্পোরেশন (CONAF) গাছটির সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

বারিচিভিচের মতে, গাছটির মাত্র প্রায় ২৮ শতাংশ অংশ জীবিত রয়েছে, যার অধিকাংশই শিকড়ের মধ্যে নিহিত। এই দুর্বলতা গাছটিকে পর্যটকদের দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে, বিশেষত যারা নির্ধারিত পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে গিয়ে শিকড় অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে। রিবরেস্টেমোস ফাউন্ডেশন এবং এফএও-এর সহায়তায় CONAF পার্কের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। বিশেষত কর্ডিলেরা দে লা কোস্টা সেক্টরে, আলেসে বনের ৩,৪২৯ হেক্টরেরও বেশি এলাকা দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেগুলোর পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন। চিলিতে ১৯৭৬ সালে আলেসেকে ‘প্রকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ’ ঘোষণা করা হয় এবং ২০০৮ সালে এর মর্যাদা বাড়িয়ে ‘বিপন্ন প্রজাতি’ (EN A2c) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার ইনো ন্যাশনাল ফরেস্টে অবস্থিত স্পাইন বিচ পাইন (*Pinus longaeva*) প্রজাতির গাছ মথুশলা দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চিত রেকর্ডের অধিকারী ছিল। ডেনড্রোক্রোনোলজি অনুসারে এর বয়স ছিল ৪,৮৫০ বছরেরও বেশি। ১৯৫০-এর দশকে এডমন্ড শুলম্যান কর্তৃক নামকরণকৃত মথুশলা দীর্ঘায়ুর প্রতীক। মথুশলার সঠিক অবস্থান ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গোপন রাখা হলেও, গ্রান আবুয়েলো পার্কের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত।

এই দুই সহস্রাব্দ প্রাচীন জীবন্ত সত্তা অতীতের পরিবেশগত পরিবর্তনের অপরিহার্য নথি হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন দাবানল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য, যা গবেষকদের ভবিষ্যতের জলবায়ু মডেল তৈরি করতে সাহায্য করে। এই গাছগুলো কেবল প্রকৃতির বিস্ময় নয়, বরং পৃথিবীর অতীত ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এদের সংরক্ষণ বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উৎসসমূহ

  • Noticias Ambientales

  • Conservation International

  • Forbes

  • The Times of India

  • Wikipedia

  • The Guardian

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ হওয়ার দাবিদার চিলির ... | Gaya One