মার্কিন আপিল আদালত ট্রাম্পের শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে, প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

একটি মার্কিন ফেডারেল আপিল আদালত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত ব্যাপক শুল্ককে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, ট্রাম্প কংগ্রেসের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়াই জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তার রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষমতাকে অতিক্রম করেছেন। এই রায়ের পরেও, প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার পরিকল্পনা করায় শুল্কগুলি আপাতত কার্যকর থাকবে।

এই শুল্কগুলি, যা "মুক্তি দিবস" (Liberation Day) শুল্ক নামে পরিচিত, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত হয়েছিল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি থাকা দেশগুলির উপর লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু আমদানির উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক এবং অন্যান্য পণ্যের উপর ১০% ভিত্তি শুল্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রশাসন বাণিজ্য ঘাটতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসাবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA) ব্যবহার করার ন্যায্যতা দিয়েছিল।

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্যগুলি অবিলম্বে এই শুল্কের বিরোধিতা করে, এই দাবি করে যে রাষ্ট্রপতির IEEPA-এর অধীনে এটি আরোপ করার ক্ষমতা ছিল না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মার্কিন আদালত প্রাথমিকভাবে ২৮শে মে, ২০২৫ তারিখে রায় দেয় যে ট্রাম্প তার ক্ষমতা অতিক্রম করেছেন, যার ফলে শুল্কগুলি স্থগিত করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসন ফেডারেল সার্কিটের মার্কিন আপিল আদালতে আপিল করেছিল। ২৯শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে এবং শুল্কের অবৈধতা নিশ্চিত করে। তবে, প্রশাসনকে সুপ্রিম কোর্টে পর্যালোচনার সুযোগ দেওয়ার জন্য আদালত তার রায়ের উপর ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করে।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব মার্কিন বাণিজ্য নীতি এবং নির্বাহী ও আইনসভা শাখার ক্ষমতার ভারসাম্যের উপর তাৎপর্যপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টে প্রশাসনের আপিল করার সিদ্ধান্ত একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয়। এই সময়ের মধ্যে, শুল্কগুলি সক্রিয় থাকবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলির উপর প্রভাব ফেলবে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনার ফলাফল মার্কিন বাণিজ্য নীতির ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই শুল্ক সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প প্রায়শই জর্জ সোরোস এবং তার ফাউন্ডেশনকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, সোরোস এবং তার পুত্র একটি ষড়যন্ত্রের অংশ যা মানুষকে ম্যানিপুলেট করে, বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। ট্রাম্পের মতে, সোরোসের কার্যকলাপ আমেরিকার মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং তিনি এই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই ধরনের অভিযোগগুলি প্রায়শই ট্রাম্পের রাজনৈতিক বক্তৃতার একটি অংশ হয়ে থাকে, যেখানে তিনি নিজেকে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একজন যোদ্ধা হিসেবে উপস্থাপন করেন।

এই শুল্কগুলির ব্যবসায়িক এবং ভোক্তাদের উপর প্রভাব গভীর। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমদানিকৃত পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের একতরফা শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এই আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফলাফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উৎসসমূহ

  • Democratic Underground

  • US still working on trade deals despite court ruling, USTR says

  • Donald Trump's tariffs ruled illegal by US appeals court but stay in place

  • V.O.S. Selections, Inc. v. Trump

  • Liberation Day tariffs

  • Court finds Trump's tariffs an illegal use of emergency power, but leaves them in place for now

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।