আফ্রিকার বিশাল তৃণভোজী প্রাণীদের বণ্টনে সোডিয়ামের ঘাটতি এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক

সম্পাদনা করেছেন: An goldy

আফ্রিকার বৃহত্তম স্থলচর স্তন্যপায়ীদের বাসস্থান এবং তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ধারণে একটি পূর্বে কম গুরুত্ব দেওয়া কারণকে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক গবেষক দল। এই দলে ইউনিভার্সিটি অফ নর্দার্ন অ্যারিজোনা (NAU) এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক (CUNY)-এর বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়, যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল মহাদেশের উদ্ভিদে সোডিয়াম বা সাধারণ লবণের সহজলভ্যতা। গবেষণার প্রধান লেখক অ্যান্ড্রু আব্রাহাম উল্লেখ করেছেন যে আফ্রিকান বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদের মধ্যে সোডিয়ামের ঘনত্ব হাজার গুণ পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে, যা বন্য তৃণভোজীদের জন্য এই খনিজটিকে এক প্রকার ‘বিলাসদ্রব্যে’ পরিণত করেছে।

হাতি, গণ্ডার এবং জিরাফের মতো বিশাল তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য সোডিয়ামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই খনিজটি তাদের স্নায়ু সঞ্চালন, পেশী সংকোচন এবং শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এই চাহিদা তাদের দেহের ভরের সাথে সরাসরি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এটি এই ধারণাকেই সমর্থন করে যে সোডিয়ামের অভাবজনিত ঝুঁকির সাথে প্রাণীর আকারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, অথচ উদ্ভিদের জন্য এই উপাদানটি ততটা অত্যাবশ্যকীয় নয়। গবেষকরা উদ্ভিদের সোডিয়ামের বিস্তারিত মানচিত্রের সাথে প্রাণীর জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং তাদের মলমূত্রের বিশ্লেষণ মিলিয়ে দেখেছেন। এর ফলে, খনিজ ঘাটতির অঞ্চলগুলি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রাণীর বণ্টনের যে অস্বাভাবিকতাগুলি দেখা যেত, সেগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই খনিজ অনাহারের নিরিখে পাওয়া যাচ্ছে।

এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যগুলি বিশাল তৃণভোজী প্রাণীদের ভূ-ভোজী (Geophagic) আচরণের নির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করে। উদাহরণস্বরূপ, কেনিয়ার হাতিরা নিয়মিতভাবে মাউন্ট এলগনের ঢালে অবস্থিত কিটুমের মতো গুহাগুলিতে পরিভ্রমণ করে। সেখানে তারা তাদের দাঁত ব্যবহার করে সোডিয়াম সমৃদ্ধ শিলা এবং মাটি চিবিয়ে খায়। কঙ্গো নদীর জঙ্গলে নদীর তলদেশ থেকে লবণাক্ত মাটি খাওয়ার মতো আচরণগুলি মূলত তাদের প্রধান খাদ্যতালিকায় খনিজের অভাবের সরাসরি প্রতিক্রিয়া। এছাড়াও, গরিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত উদ্ভিদের জন্য লড়াই করার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, মাসাই-মারা থেকে কালাহারি পর্যন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক লবণাক্ত জলাভূমিগুলিতে ওয়াইল্ডবিস্ট (Gnu), জেব্রা এবং গণ্ডারের পালকে নিয়মিত আনাগোনা করতে দেখা যায়।

গবেষকরা মনে করছেন, এই লবণ-সংক্রান্ত বিষয়টি পশ্চিম আফ্রিকার কিছু পরিবেশগতভাবে সমৃদ্ধ কিন্তু সোডিয়াম-স্বল্প অঞ্চলে অনেক মেগাহার্বিভোরের অনুপস্থিতির কারণ হতে পারে। NAU-এর ইকোইনফরমেটিক্সের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্রিস ডাটি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই বিশাল প্রাণীদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সোডিয়ামের অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সম্ভবত চোরাশিকার এবং মাটির কম উর্বরতার মতো অন্যান্য কারণগুলির সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করে। এই সীমাবদ্ধতাগুলি তাদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

সংরক্ষণ প্রচেষ্টার দৃষ্টিকোণ থেকে এই আবিষ্কারগুলির গভীর প্রভাব রয়েছে। কারণ, বর্তমানে বিদ্যমান অনেক সুরক্ষিত অঞ্চলই এমন ভূখণ্ডে অবস্থিত যেখানে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত বাড়াতে পারে। কারণ, খনিজের তীব্র চাহিদা থাকা প্রাণীরা সোডিয়ামের উৎস খুঁজতে মানুষের বসতির কাছাকাছি চলে আসতে বাধ্য হয়। বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলছেন যে মেগাহার্বিভোর জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য নতুন অভয়ারণ্য পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়নের সময় সোডিয়ামের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটিকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। এই বিষয়টি সংরক্ষণ নীতি নির্ধারণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।

9 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • rmf24.pl

  • MyScience.ch

  • Bluewin

  • The NAU Review

  • RMF24

  • Frontiers

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।