বিড়ালের স্বতন্ত্র সনাক্তকরণে 'পুর' ডাক 'মিয়াও'-এর চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য: গবেষণা

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পোষা বিড়ালের কণ্ঠস্বরের একটি অপ্রত্যাশিত ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য উন্মোচিত হয়েছে, যা প্রাণীটির যোগাযোগ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিড়ালের ছন্দোবদ্ধ 'পুর' (purr) বা ঘরঘর শব্দ, যা সাধারণত শান্ত বা সন্তুষ্টির প্রতীক, তা তাদের বহুল ব্যবহৃত 'মিয়াও' (meow) ডাকের তুলনায় স্বতন্ত্র ব্যক্তি সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ধ্বনি সংকেত হিসেবে কাজ করে।

গবেষকরা মানুষের বাক্ শনাক্তকরণ প্রযুক্তির অনুরূপ পদ্ধতি ব্যবহার করে উভয় প্রকার ধ্বনির কাঠামোগত বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেন। এই বিশ্লেষণ নিশ্চিত করে যে, যদিও প্রতিটি বিড়ালের মিয়াও ডাক স্বতন্ত্র, তবে পুর আওয়াজের স্থিতিশীলতা এটিকে সনাক্তকরণের জন্য অনেক বেশি সুসংগত প্রমাণ করে। প্রতিটি অধ্যয়নে অংশগ্রহণকারী বিড়ালের নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পুর ধ্বনি ছিল, যা সাধারণত মা ও শাবকের প্রাথমিক যোগাযোগের সময় অথবা বিড়ালের আরামদায়ক অবস্থায় শোনা যায়।

অন্যদিকে, মিয়াও ডাকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য নমনীয়তা, বিশেষত যখন তারা মানুষের সঙ্গে খাদ্য বা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য যোগাযোগ করে। এই অভিযোজনশীলতা একই ব্যক্তির মধ্যে মিয়াও ধ্বনিতে ব্যাপক তারতম্য সৃষ্টি করে, যা পুরের স্থির প্রকৃতির বিপরীত। গৃহপালিত বিড়ালরা প্রায় ৯,৫০০ বছর আগে থেকে মানুষের সঙ্গে বসবাস শুরু করেছে এবং এই দীর্ঘ সহাবস্থান তাদের কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন এনেছে। গবেষকরা এই গৃহপালিত বিড়ালের মিয়াও ডাকের সঙ্গে তাদের পাঁচটি বন্য আত্মীয়, যার মধ্যে আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাট এবং কুগার অন্তর্ভুক্ত, তাদের ডাকের তুলনা করেছেন। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, গৃহপালিত বিড়ালের মিয়াও ডাক তাদের বন্য সহচরদের তুলনায় অনেক বেশি পরিবর্তনশীলতা প্রদর্শন করে।

বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, মানুষের সঙ্গে জীবনযাপনের বিভিন্ন রুটিন এবং প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়েই বিড়ালদের মধ্যে এই ধ্বনিগত নমনীয়তা বিবর্তিত হয়েছে। পোষা প্রাণীর যত্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ মাইকেল ডেলডোগা উল্লেখ করেছেন যে, মিয়াও মূলত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের একটি উপায়, যা ক্ষুধার্ত থাকা বা অন্য কোনো চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, পুর বা ঘরঘর শব্দকে প্রায়শই ইতিবাচক পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়, যেমন মায়ের সঙ্গে শাবকের যোগাযোগ বা মালিকের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে। এই পুর ধ্বনি, যা এক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং বদ্ধ মুখ থেকে নির্গত হয়, তা বিড়ালের স্বীকৃতির একটি রূপ হিসেবেও কাজ করে।

গৃহপালিত বিড়ালরা, যারা মূলত আফ্রিকার বনবিড়ালের (Felis libyca) জাত, তারা এই ধ্বনিগত বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে যা তাদের সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে তাদের সফলভাবে মিশে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে প্রায় ২২০ মিলিয়ন মালিকানাধীন এবং ৪৮০ মিলিয়ন বিপথগামী বিড়াল ছিল, যা তাদের যোগাযোগের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে এই নতুন গবেষণাটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, যখন নির্দিষ্টভাবে একটি বিড়ালকে সনাক্ত করার প্রশ্ন আসে, তখন তার স্বতন্ত্র এবং স্থিতিশীল পুর ধ্বনিটি মানুষের জন্য মিয়াও-এর চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য অ্যাকোস্টিক কিউ বা ধ্বনিগত সূত্র হিসেবে কাজ করে। এই তথ্যটি পশুচিকিৎসক এবং বিড়াল গবেষকদের জন্য ফেলিড প্রাণীদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

15 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • research-in-germany.org

  • ResearchGate

  • ResearchGate

  • Associazione Teriologica Italiana

  • Museum für Naturkunde Berlin

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

বিড়ালের স্বতন্ত্র সনাক্তকরণে 'পুর' ডাক 'ম... | Gaya One