মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হাঙ্গেরির 'পাকশ II' পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য নিষেধাজ্ঞায় অব্যাহতি
সম্পাদনা করেছেন: Svetlana Velgush
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের উপর আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা থেকে হাঙ্গেরিকে অব্যাহতি প্রদান করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন 'রোসাটম' পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র 'পাকশ II' নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই অব্যাহতি সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ওয়াশিংটন ডিসিতে, যেখানে ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের ফলস্বরূপ, মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সাধারণ লাইসেন্স জারি করে, যা 'পাকশ II' প্রকল্পকে নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত করে। প্রধানমন্ত্রী অরবান পরবর্তীতে এই খবর নিশ্চিত করেন। এই পদক্ষেপটি প্রমাণ করে যে ওয়াশিংটন তার ইউরোপীয় মিত্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রয়োগের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিশ্চিত করেছেন যে এই ছাড়টি বিশেষভাবে হাঙ্গেরির জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছে।
'পাকশ' বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সম্প্রসারণ প্রকল্পে দুটি নতুন বিদ্যুৎ ইউনিট যুক্ত হবে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট। এই বিশাল নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে 'রোসাটম'। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে। এই চুক্তিটি হাঙ্গেরির দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তার ভিত্তি এবং নিয়ন্ত্রিত ইউটিলিটি মূল্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে, ২৫শে জুন, ২০২৫ তারিখে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিদেশী সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (OFAC) একটি অস্থায়ী অনুমোদন (সাধারণ লাইসেন্স ১১৫বি) জারি করেছিল, যা ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কিছু বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি লেনদেনের অনুমতি দিয়েছিল।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ২৫শে নভেম্বরের শীর্ষ সম্মেলনটি কেবল পারমাণবিক প্রকল্প নিয়েই ছিল না, বরং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরির মধ্যে একটি বৃহত্তর কৌশলগত জ্বালানি অংশীদারিত্বের সূচনা করে। এই বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে হাঙ্গেরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) ক্রয় করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে একটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, আমেরিকান কোম্পানি ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক কোং হাঙ্গেরির বিদ্যমান 'পাকশ I' ইউনিটের জন্য প্রায় ১১৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করবে, যা ২০২৮ সাল থেকে শুরু হবে।
'পাকশ II' নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সাথে মূল চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৪ সালে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২.৫ বিলিয়ন ইউরো। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে একটি কূটনৈতিক সমঝোতা হিসেবে দেখছেন, যেখানে নিষেধাজ্ঞায় ছাড়ের বিনিময়ে মার্কিন সরবরাহকারীদের সাথে বড় আকারের দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি চুক্তি করা হয়েছে। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো নিশ্চিত করেছেন যে এই সমঝোতা দেশটির জন্য জ্বালানি সরবরাহের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। এই স্থিতিশীলতা কার্যকর হবে ২১শে নভেম্বর থেকে, যেদিন রাশিয়ার জ্বালানি সংস্থাগুলোর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এই সামগ্রিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
উৎসসমূহ
ТСН.ua
Serbia SEE Energy Mining News
UNN
Paks2
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
