ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পথে নতুন কৌশল: হাঙ্গেরির ভেটো এড়িয়ে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

ইউরোপীয় কমিশন এবং ইউক্রেন হাঙ্গেরির রাজনৈতিক বাধা অতিক্রম করার জন্য একটি অভিনব প্রযুক্তিগত পথ, যা 'ফ্রন্টলোডিং' নামে পরিচিত, তাতে সম্মত হয়েছে। এই কৌশলটি ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে সাহায্য করবে। এই সিদ্ধান্তটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেনের সদস্যপদ আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে চলমান অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এই নতুন পদ্ধতি আলোচনার ক্লাস্টারগুলির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা না করে প্রযুক্তিগত কাজ শুরু করার অনুমতি দেয়, যা হাঙ্গেরির অবস্থানের কারণে আটকে ছিল।

এই অগ্রগতি সাধিত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখে লাভভে অনুষ্ঠিত ইইউ মন্ত্রীদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে, যা তৎকালীন ডেনিশ প্রেসিডেন্সি দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল। এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেনকে ছয়টি আলোচনার ক্লাস্টারের মধ্যে তিনটির জন্য ইইউ-এর আলোচনা অবস্থান হস্তান্তর করা হয়, যা প্রযুক্তিগত আলোচনার ভিত্তি স্থাপন করে। বাকি তিনটি ক্লাস্টারের জন্য প্রয়োজনীয় নথি পরবর্তী বছর, ২০২৬ সালের শুরুতে সাইপ্রিয়ট প্রেসিডেন্সির অধীনে হস্তান্তরের একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ ইউক্রেনকে রাজনৈতিক অবরোধ শিথিল হওয়ার আগেই ক্লাস্টার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে সক্ষম করবে।

ইউরোপীয় কমিশনের সদস্য মার্তা কস এই উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে সংস্কার প্রক্রিয়া কোনো সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না, কারণ সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ইউক্রেনের ওপর হাঙ্গেরির অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, ডেনমার্কের ইইউ বিষয়ক মন্ত্রী মারি বিয়েরে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে হাঙ্গেরির বাধা দূর হলেই সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারগুলি প্রায় একই সাথে খোলা ও বন্ধ করা সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, ইউক্রেন এবং ইইউ একটি দশ-দফা অগ্রাধিকারমূলক সংস্কার পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে, যা মূলত দুর্নীতি দমন এবং আইনের শাসন শক্তিশালীকরণের ওপর জোর দেয়। এই 'ফ্রন্টলোডিং' পদ্ধতি প্রতিবেশী মলডোভাকেও একই ধরনের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রযোজ্য হবে বলে জানা গেছে।

এই কৌশলটি এমন সময়ে এলো যখন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, যিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, পরবর্তী নির্বাচনের আগে ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও এই প্রক্রিয়াটি প্রযুক্তিগতভাবে আলোচনা শুরু করার অনুমতি দেয়, চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপের জন্য এখনও সমস্ত ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ঐকমত্য প্রয়োজন, যা হাঙ্গেরির ভেটোর ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার এই প্রয়াসের পাশাপাশি, ইইউ তার অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়েও আলোচনা করছে, যা বড় সদস্য রাষ্ট্র গ্রহণে অপরিহার্য।

ইউরোপীয় কমিশন পূর্বে উল্লেখ করেছে যে বর্ধিত ইইউ-এর জন্য মূল্যবোধ, নীতি, বাজেট এবং শাসনব্যবস্থার মতো চারটি প্রধান ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ইউক্রেনের মতো বড় সদস্য রাষ্ট্রকে সফলভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাজেট এবং শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ সংস্কারগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেনকে তার সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করার জন্য ইউরোপীয় কমিশন ইতিমধ্যে ইউক্রেন সুবিধার (Ukraine Facility) অধীনে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত অনুদান ও ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার তারাস কাচকা পূর্বে উল্লেখ করেছিলেন যে এই পরিস্থিতিটি অনন্য, কারণ অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র এবং কমিশন চাইছে যে ইউক্রেনের অগ্রগতি যেন হাঙ্গেরির কারণে থেমে না যায়। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ইউক্রেনকে তার লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও, ২০২৭ সালের সদস্যপদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা, তা এখনও একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে।

15 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • Deutsche Welle

  • The Kyiv Independent

  • European Pravda

  • EU NEIGHBOURS east

  • European Pravda

  • European Commission

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।