মানব ভাষার উৎপত্তি: জৈব-সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার সম্মিলিত ফল

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

মানব ভাষার উৎপত্তি কোনো একক বিবর্তনীয় উল্লম্ফনের ফল নয়, বরং এটি একাধিক জৈবিক ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার সংযোগের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে—এই মর্মে এক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল একটি সুসংহত কাঠামো উপস্থাপন করেছে। এই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি জৈব-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণকে প্রাধান্য দেয়, যেখানে ভাষার জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থাটি বিভিন্ন স্বতন্ত্র পথে বিকশিত উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ভাষার অপরিহার্য অংশগুলি, যেমন স্বর শেখার ক্ষমতা, ব্যাকরণ গঠনের প্রক্রিয়া এবং সামাজিক সহযোগিতার প্রবণতা, সকলেই পৃথক ধারায় বিকশিত হয়েছিল এবং পরে একত্রিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে।

এই গবেষণার প্রথম লেখক, হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেমের ইনবাল আরনন স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য কোনো একক ব্যাখ্যা প্রস্তাব করা ছিল না, বরং "দেখানো যে কীভাবে বহুমাত্রিক এবং জৈব-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন উদ্ভূত তথ্যের উৎসের সাথে মিলিত হয়ে পুরোনো প্রশ্নগুলির উপর নতুন আলো ফেলতে পারে"। তিনি হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেমের অধ্যাপক, যিনি ভাষার অধিগ্রহণ এবং প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে গবেষণা করেন। সহ-লেখক সাইমন ফিশার, যিনি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সাইকো-লিঙ্গুইস্টিক্সের পরিচালক এবং নেদারল্যান্ডসের ডন্ডার্স ইনস্টিটিউট ফর ব্রেন, কগনিশন অ্যান্ড বিহেভিয়ারে ভাষা ও জেনেটিক্সের অধ্যাপক, উল্লেখ করেছেন যে এই পদ্ধতিটি বিবর্তনীয় বৃক্ষের বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ভাষার বিভিন্ন দিক নিয়ে ফলপ্রসূ অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়। ফিশার এফওএক্সপি২ (FOXP2) জিনের সহ-আবিষ্কারক, যা মানুষের কথা ও ভাষার ব্যাধির সাথে জড়িত প্রথম জিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

গবেষকরা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জীববিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনের পক্ষে সওয়াল করেছেন, এবং জোর দিয়েছেন যে যখন এই শাখাগুলি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করত, তখন অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। এই সমন্বিত কাঠামোটি তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত সময়কালকে বিবেচনা করে: ব্যক্তির স্তর (ভাষা শিক্ষা), সম্প্রদায়ের স্তর (সাংস্কৃতিক বিবর্তন), এবং প্রজাতির স্তর (জৈবিক বিবর্তন)। এই জৈব-সাংস্কৃতিক বিবর্তন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে জীববিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, পুরোনো এবং সীমাবদ্ধ বিবর্তনীয় মডেলগুলিকে অতিক্রম করে ক্রমশ গুরুত্ব লাভ করছে।

এই কাঠামোটি তিনটি নির্দিষ্ট কেস স্টাডির মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ভোকাল প্রোডাকশন লার্নিং, যা স্বর পরিবর্তন এবং শেখার ক্ষমতা পরীক্ষা করে, যা নন-হিউম্যান প্রাইমেটদের মধ্যে সীমিত। দ্বিতীয়টি, লিঙ্গুইস্টিক স্ট্রাকচার, হোমসাইন এবং উদীয়মান সাংকেতিক ভাষা বিশ্লেষণ করে, যা ইঙ্গিত দেয় যে কাঠামোটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট জৈবিক, জ্ঞানীয় এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার এক অনন্য সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তৃতীয় কেস স্টাডি, সোশ্যাল আন্ডারপি্নিংস, সামাজিক তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য মানুষের অনন্য অভ্যন্তরীণ চালনার উপর আলোকপাত করে, এবং অনুমান করে যে নন-হিউম্যান ক্ষমতাগুলির পরিবর্তন মানুষের ভাষাগত ক্ষমতা তৈরি করেছে।

এই গবেষণায় দেখা গেছে যে সাংস্কৃতিক বিবর্তন কীভাবে ভাষার পরিসংখ্যানগত কাঠামো তৈরি করে, যেখানে শব্দ ফ্রিকোয়েন্সি একটি পাওয়ার ল (Zipfian distribution) অনুসরণ করে, যা শিশুদের ভাষা শিক্ষণে সুবিধা প্রদান করে। এই বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ভাষার উৎপত্তির বহু পুরোনো প্রশ্নের সমাধানে নতুন পথ দেখাচ্ছে, যা ভাষাতত্ত্ব, স্নায়ুবিজ্ঞান, জেনেটিক্স, মনোবিজ্ঞান এবং প্রাণী আচরণের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত নতুন ডেটা ব্যবহার করে। সাইমন ফিশার উল্লেখ করেছেন যে একক কোনো বিশেষত্বের সন্ধান না করে, ভাষার বিবর্তনকে একাধিক উৎসের মিথস্ক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত। এই কাঠামোটি ভাষার বিবর্তনের সময়রেখা, এর উদ্ভবের কারণ এবং মানব ভাষা কীভাবে নন-হিউম্যান যোগাযোগ ব্যবস্থার থেকে গুণগতভাবে আলাদা—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধানে সহায়ক হতে পারে। এই গবেষণাটি মানব ভাষার জন্মকে কেবল জেনেটিক পরিবর্তনের ফল হিসেবে না দেখে, বরং সাংস্কৃতিক সঞ্চালন এবং জৈবিক সীমাবদ্ধতার সম্মিলিত প্রভাব হিসেবে দেখায়, যা প্রায় ১৫০,০০০ থেকে ২০০,০০০ বছর আগের মানব বিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

উৎসসমূহ

  • Neuroscience News

  • Neuroscience News

  • ResearchGate

  • OSF

  • Israel Institute for Advanced Studies

  • Blogs@NTU

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।