মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেনের জন্য ২৮-দফা শান্তি পরিকল্পনার আল্টিমেটাম: সময়সীমা ২৭ নভেম্বর

২০২৫ সালের ২১শে নভেম্বর, যখন কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভের সামনে একটি কঠোর শর্ত আরোপ করেছেন। এই শর্তটি রুশ-ইউক্রেন সংঘাত নিরসনের জন্য তাঁর প্রস্তাবিত ২৮-দফা শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত। হোয়াইট হাউসের প্রধান, যিনি ফক্স রেডিওতে কথা বলছিলেন, ইউক্রেনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন: তা হলো ২০২৫ সালের ২৭শে নভেম্বর, যা থ্যাঙ্কসগিভিং ডে। ট্রাম্প স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যদি যুদ্ধ চলতে থাকে, তবে ইউক্রেন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবিত এলাকার চেয়েও বেশি ভূখণ্ড হারাবে।

বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, এই পরিকল্পনাটি তৈরি করতে বিশেষ দূত স্টিভ হুইটকাফ এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিছু সংবাদমাধ্যম, বিশেষত দ্য গার্ডিয়ানকে উদ্ধৃত করে, উল্লেখ করেছে যে নথির কিছু শব্দচয়ন দেখে মনে হচ্ছে এটি মূলত রাশিয়ান ভাষায় লেখা হয়েছিল, যার মধ্যে 'নাৎসিবাদ' সংক্রান্ত একটি ধারার উল্লেখ রয়েছে। এই পরিকল্পনাটি মূলত গত আগস্টে অ্যাঙ্করেজে আলোচিত একটি উদ্যোগের হালনাগাদ সংস্করণ। এতে ইউক্রেনকে কার্যত ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে মেনে নিতে হবে। একই সাথে, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে বর্তমান যোগাযোগ রেখাগুলো হিমায়িত রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, নথিতে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ৬০০,০০০-এ সীমাবদ্ধ রাখা এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার সাংবিধানিক অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই আল্টিমেটামকে 'অসম্ভব পছন্দ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন—একদিকে জাতীয় মর্যাদা রক্ষা, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান অংশীদার হারানোর ঝুঁকি। এই কঠোর মূল্যায়নের পরেও, জেলেনস্কির দল, যার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভও রয়েছেন, নথিটি প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন এবং এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। ইউক্রেন মানবিক দিক থেকেও পদক্ষেপ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে তারা ভ্যাটিকানের শরণাপন্ন হয়েছে।

ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল পোপ লিও চতুর্দশের সাথে সাক্ষাৎ করে নির্বাসিত শিশু এবং বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়গুলো সমাধানের জন্য পবিত্র সিংহাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপ-প্রধান ইরিনা ভেরেশচুক জোর দিয়ে বলেছেন যে ভ্যাটিকানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিলে তা রাশিয়ার উপর প্রত্যাবর্তনের অনুরোধে সাড়া দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। তবে, পোপ লিও চতুর্দশ নিজেই এর আগে সংঘাতের সরাসরি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভ্যাটিকানের ভূমিকা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।

রাশিয়ান ফেডারেশনের অবস্থান, যা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২১শে নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তুলে ধরেছেন, তা হলো এই ২৮-দফা পরিকল্পনা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ভিত্তি হতে পারে। পুতিন আলোচনায় বসার জন্য তাঁর প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন যে যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান গতিপ্রকৃতি, বিশেষত পোকরোভস্কের দিকে তাদের অগ্রগতি মস্কোর জন্য সন্তোষজনক।

ইউরোপীয় মিত্ররা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ ট্রাম্পের সাথে একটি গোপন আলোচনা করেছেন, যার ফলস্বরূপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের স্তরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং কিয়ার স্টারমারের মতো নেতারা কিয়েভকে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেও জোর দিয়েছেন যে শান্তি যেন আত্মসমর্পণ না হয়। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকুসর দান শান্তির শর্তাবলী এবং ইউরোপের নিরাপত্তার মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সংযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।