সামরিক বাহিনীর সংহতিতে মাদাগাস্কার সংকটে নতুন মোড়: যুব প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা সিএপিএসএটি-এর

অক্টোবর ২০২৫-এর শেষভাগে মাদাগাস্কারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নাটকীয় বাঁক নিয়েছে। দেশটির বিশেষ অভিযান ও সন্ত্রাস দমন ইউনিট, যা সিএপিএসএটি (CAPSAT) নামে পরিচিত, তারা প্রকাশ্যে তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এই ঘটনা রাজধানী আন্তানানারিভোতে চলমান অস্থিরতাকে আরও তীব্র করেছে, যা ইতিমধ্যেই প্রাণহানি ও সরকার পতনের মতো গুরুতর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

এই সংকট শুরু হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, যখন সামাজিক মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে 'জেন জি' (Gen Z) প্রজন্ম দীর্ঘস্থায়ী জল ও বিদ্যুৎ সংকটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। তাদের মূল দাবি ছিল উন্নত জনসেবা এবং সরকারের কাছে জবাবদিহিতা। এই আন্দোলন নেপাল ও কেনিয়ার অনুরূপ তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত। পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় যখন অক্টোবরের ২ তারিখে সিএপিএসএটি এক বিবৃতিতে জানায়, "আমরা, যারা উর্দি পরি, জনগণের জন্য জেগে উঠছি।" সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে এমন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ নজিরবিহীন।

সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রাই রাজোয়েলিনা অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর সরকার ভেঙে দিয়েছিলেন। তবে বিক্ষোভকারীরা তাঁর পদত্যাগেই অনড়। জাতিসংঘ জানিয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর প্রতিক্রিয়ার কারণে অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা এই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে দাবি করেছেন যে মৃতের সংখ্যা ১২ এবং তারা সকলেই লুটতরাজকারী।

সিএপিএসএটি-এর এই অবস্থান দেশটির রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। উল্লেখ্য, এই অভিজাত ইউনিটটি ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বর্তমানে, সিএপিএসএটি-এর জেনারেলরা দাবি করছেন যে তারা সমগ্র সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন এবং সমস্ত নির্দেশ তাদের সদর দপ্তর থেকেই আসবে। এর বিপরীতে, প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা এটিকে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী "অবৈধভাবে এবং বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা" বলে অভিহিত করেছেন।

এই সংঘাতের মূল কারণগুলি কাঠামোগত অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়। তরুণ আন্দোলনকারীদের বিকেন্দ্রীভূত কাঠামো এবং প্রতীক হিসেবে অ্যানিমে 'ওয়ান পিস' থেকে নেওয়া খুলি ও ক্রসবোনের ব্যবহার আধুনিক প্রতিবাদের এক নতুন রূপ তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংঘাত নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে, দেশের স্থিতিশীলতা সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি নেতৃত্বের সাড়াদানের ওপর নির্ভর করছে।