অস্ট্রেলিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ: ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

সম্পাদনা করেছেন: gaya ❤️ one

Australia

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বজুড়ে এক নতুন নজির স্থাপন করতে চলেছে। দেশটি ১৬ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের জন্য সরকারিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে, যা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১০ই ডিসেম্বর থেকে। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি 'অনলাইন সেফটি অ্যামেন্ডমেন্ট (সোশ্যাল মিডিয়া মিনিমাম এজ) অ্যাক্ট ২০২৪'-এর অধীনে আনা হয়েছে। এই আইনের মূল দায়িত্ব বর্তাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর ওপর। নিয়ম না মানলে তাদের উপর সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা ধার্য করা হতে পারে। আইন অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মগুলোকে অবশ্যই এই বয়সের গোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার আটকাতে 'যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ' নিতে হবে, যা নতুন নিবন্ধন এবং ইতিমধ্যেই চালু থাকা অ্যাকাউন্ট উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই সংস্কারকে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ হিসেবে সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে, এর প্রধান লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্মের ওপর সামাজিক ক্ষতি কমানো এবং তাদের শৈশবের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা ফিরিয়ে আনা। এই আইনটি বিশেষভাবে সেইসব প্ল্যাটফর্মকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, যাদের প্রধান বা উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে সহজ করা। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রথম দশটি প্ল্যাটফর্মের তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, টিকটক, ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, থ্রেডস, কিক এবং টুইচ। যোগাযোগ মন্ত্রী অ্যানিকা ওয়েলস স্পষ্ট করেছেন যে ই-সেফটি কমিশনারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই তালিকা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো যেতে পারে।

এই নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার আগেই মেটা (Meta) তাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা শুরু করেছে। এই ব্যবহারকারীদের ডেটা ব্যাকআপ নেওয়া বা প্রোফাইল মুছে ফেলার বিকল্প দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সংস্থাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। উদাহরণস্বরূপ, স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারীর জন্মতারিখের পাশাপাশি অ্যাকাউন্টের আচরণগত সংকেত ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। তবে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বয়স যাচাইয়ের জন্য শুধুমাত্র পরিচয়পত্রের প্রমাণপত্রের ওপর নির্ভর করা যাবে না। এই হস্তক্ষেপকে সমর্থকরা জনস্বাস্থ্য রক্ষার একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা মদ্যপানের বয়সের মতো বিদ্যমান বিধিনিষেধের সঙ্গে তুলনীয়। পরিসংখ্যান বলছে, অস্ট্রেলিয়ার ৯৬ শতাংশ শিশুই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এবং এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ক্ষতিকারক কন্টেন্টের সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছে।

এই নতুন নিয়ম কার্যকর করার পথে কিছু সহজাত জটিলতা রয়েছে। মন্ত্রী ওয়েলস সতর্ক করেছেন যে শুরুর দিনেই প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত হবে না। একইভাবে, ই-সেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট জানিয়েছেন যে সমস্ত ১৬ বছরের কম বয়সী অ্যাকাউন্ট তাৎক্ষণিকভাবে মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। বর্তমানে এই আইনের আইনি দিকটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্ট, দুই ১৫ বছর বয়সী আবেদনকারী নোহা জোন্স এবং মেসি নেইল্যান্ডের সমর্থনে অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্টে একটি সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ দায়ের করেছে। তাদের যুক্তি হলো, এই ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক যোগাযোগের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, কারণ তারা ডিজিটাল স্থানকে তরুণ প্রজন্মের আধুনিক গণ-আলোচনা ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করে।

সমালোচকরা বয়স যাচাই প্রযুক্তির কার্যকারিতা এবং গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগও উত্থাপন করেছেন, যদিও আইনটিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোনো অস্ট্রেলিয়ানকে ডিজিটাল আইডি ব্যবহার করতে বাধ্য করা হবে না। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে অপ্রাপ্তবয়স্করা নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র থেকে সরে গিয়ে কম দৃশ্যমান অনলাইন পরিবেশে কার্যকলাপ শুরু করতে পারে অথবা নিয়ম এড়ানোর জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। তা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক মহল এই বাস্তবায়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন আনতে পারে এবং বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় এই দেশকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে সাহায্য করতে পারে।

10 দৃশ্য

উৎসসমূহ

  • Bloomberg Business

  • UNICEF Australia

  • Korea Herald

  • The University of Sydney

  • Wikipedia

  • The Guardian

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।