NASA–র নতুন X-59 শান্ত সুপারসনিক জেটটি তার প্রথম উড়ানের জন্য টেকঅফ করেছে.
নাসার এক্স-৫৯ শান্ত সুপারসনিক জেটের প্রথম উড়ান সম্পন্ন: শব্দদূষণ মুক্তির নতুন দিগন্ত
সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) এবং তাদের সহযোগী লকহিড মার্টিন (Lockheed Martin)-এর স্কাঙ্ক ওয়ার্কস (Skunk Works) বিভাগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে, পরীক্ষামূলক এক্স-৫৯ (X-59) সুপারসনিক জেট বিমানটি তার প্রথম সফল উড়ান সম্পন্ন করে, যা শান্ত সুপারসনিক প্রযুক্তির দিকে এক বিশাল অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনাটি বিমান চালনার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল, যেখানে গতির সঙ্গে শব্দের তীব্রতার চিরাচরিত সংঘাতের সমাধান খোঁজা হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার পালমডেল রিজিওনাল এয়ারপোর্ট থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স বেসের উপর ডিম্বাকৃতির 'রেসকোর্স' প্যাটার্নে প্রদক্ষিণ করে। এই প্রাথমিক উড়ানটি মূলত বিমানের উড্ডয়ন যোগ্যতা এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য ছিল, যেখানে বিমানটি শব্দের গতির চেয়ে কম গতিতে (সাবসনিক) উড়েছিল। লকহিড মার্টিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এক্স-৫৯ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছে এবং নিরাপদে অবতরণ করেছে, যা প্রাথমিক উড্ডয়ন গুণাবলী এবং বাতাসের তথ্যগত কর্মক্ষমতা যাচাই করেছে। বিমানটি GE অ্যারোস্পেস এফ৪১৪-জিই-১০০ টারবাইন দ্বারা চালিত, যা ২২,০০০ পাউন্ড থ্রাস্ট সরবরাহ করে।
এক্স-৫৯ এর মূল উদ্দেশ্য হলো নাসার কোয়েস্ট (QueSST - Quiet Supersonic Technology) মিশনের অংশ হিসেবে প্রমাণ করা যে সুপারসনিক গতিতে উড়লেও ভূপৃষ্ঠে প্রচলিত তীব্র শব্দতরঙ্গ বা 'সনিক বুম' সৃষ্টি হবে না। বিমানটির বিশেষ নকশা, যার মধ্যে রয়েছে লম্বা সূচালো নাক এবং পিছনের দিকে বাঁকানো ডানা, বাতাসের প্রবাহকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাতে চাপের তরঙ্গগুলি একত্রিত না হয়ে ছড়িয়ে যায়। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে যে শব্দ পৌঁছাবে, তা তীব্র গর্জনের পরিবর্তে একটি মৃদু 'থাম্প'-এর মতো শোনাবে, যা একটি গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দের সমান, অর্থাৎ ৬০ থেকে ৮০ ডেসিবেল (dB) এর মধ্যে। বিমানটি প্রায় ম্যাখ ১.৪ গতিতে পৌঁছানোর জন্য নকশা করা হয়েছে এবং এটি ৫৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম।
ঐতিহাসিকভাবে, তীব্র শব্দদূষণের কারণে স্থলভাগের উপর দিয়ে সুপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান চলাচল নিষিদ্ধ ছিল, যেমনটি কনকর্ড (Concorde) বা টিুপোলেভ টু-১৪৪ (Tupolev Tu-144) এর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল। এক্স-৫৯ এর ডেটা, যা পরবর্তী ধাপে বিভিন্ন জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে উড়ে সংগৃহীত হবে, তা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে নতুন, তথ্য-নির্ভর শব্দ সহনশীলতার সীমা নির্ধারণে সহায়তা করবে। লকহিড মার্টিন ২০১৬ সাল থেকে এই লো-বুম ফ্লাইট ডেমোনস্ট্রেটর প্রকল্পের অধীনে এক্স-৫৯ তৈরি করছে, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। এই প্রযুক্তিগত সাফল্য ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের পথ সুগম করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
উৎসসমূহ
Space.com
NASA to Test Technology for X-59’s Unique Shock Wave Measurements
Using NAS-Developed Tools to Quiet the Boom of Supersonic Flight
NASA’s Quesst to quiet the sonic boom with its supersonic X-59
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
