অলিভিয়ের সালাদ থেকে বলকান অঞ্চলের 'রুস্কা সালাতা': আভিজাত্যের বিবর্তন
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
বিখ্যাত অলিভিয়ের সালাদ, যা সার্বিয়া এবং বলকান অঞ্চলের দেশগুলিতে 'রুস্কা সালাতা' নামে পরিচিত, আজও ছুটির দিনের একটি অপরিহার্য পদ হিসেবে বিবেচিত, যদিও এর বর্তমান রূপটি মূল সৃষ্টি থেকে বহুলাংশে ভিন্ন। এই সালাদের ঐতিহাসিক যাত্রা আভিজাত্য থেকে সাধারণের রান্নাঘরে পৌঁছানোর এক চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যা সময়ের সাথে সাথে উপকরণগত পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটায়। এই রূপান্তরের ফলে, মূল রন্ধনশৈলীর গভীরতা এবং উপকরণগত জাঁকজমক অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, যা ঐতিহ্যপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মূল অলিভিয়ের সালাদটি উনিশ শতকের মস্কোর অভিজাত রেস্তোরাঁ 'হার্মিটেজ'-এর ফরাসি-বেলজিয়ান শেফ লুইসেন অলিভিয়েরের হাতে তৈরি হয়েছিল, যা মূলত 'ওয়াইল্ড গেম মেয়োনেজ' নামে পরিচিত ছিল। এই প্রাথমিক সংস্করণে গ্রাউস (এক ধরণের বন্য পাখি), ক্রাফিশের লেজ, ক্যাভিয়ার, জলপাই এবং ক্যাপার্সের মতো বিলাসবহুল উপাদান ব্যবহার করা হতো, যা একটি গোপন রেসিপির মেয়োনেজ দিয়ে একত্রে বাঁধা থাকত। শেফ অলিভিয়ের তাঁর রেসিপিটিকে কঠোরভাবে গোপন রাখতেন, এবং ধারণা করা হয় যে তাঁর মৃত্যুর পর (১৮৮৩ সালে) সেই গোপন রেসিপিটি চিরতরে হারিয়ে যায়। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর এক সহকারী ইভান ইভানোভ রেসিপির একটি অংশ অনুমান করে 'ক্যাপিটাল সালাদ' নামে একটি অনুরূপ পদ পরিবেশন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তা সংবাদপত্রে বিক্রি করে দেন।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, বিশেষত বলশেভিক বিপ্লবের পরে, এই সালাদের উপকরণে এক বিশাল পরিবর্তন আসে, যা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং সহজলভ্যতার ওপর ভিত্তি করে ঘটেছিল। বিলাসবহুল উপাদান যেমন গ্রাউস এবং ক্রাফিশের বদলে সেদ্ধ মুরগি, হ্যাম, বা সসেজ ব্যবহার শুরু হয়, এবং ক্যাপার্স ও জলপাইয়ের পরিবর্তে আচারযুক্ত শসা ও মটরশুঁটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলকান অঞ্চলে, যেমন সার্বিয়াতে, এই পদটি 'রুস্কা সালাতা' নামে পরিচিত এবং এটি সাধারণত হ্যাম বা মুরগির মাংস, আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ডিম এবং আচারযুক্ত শসা দিয়ে তৈরি হয়, যা মেয়োনেজ দিয়ে মাখানো হয়। এই আধুনিক সংস্করণটি মূল অলিভিয়েরের সাথে কেবল সাদৃশ্য বহন করে, কিন্তু তার আভিজাত্য ধরে রাখতে পারেনি।
বলকান দেশগুলিতে, রুস্কা সালাতা নববর্ষ এবং ক্রিসমাসের মতো বিশেষ উৎসবে অপরিহার্য একটি খাবার, যা প্রায়শই গ্রিল করা মাংসের সঙ্গে পরিবেশিত হয়। প্রতিটি গৃহকর্ত্রীর নিজস্ব সংস্করণ থাকার কারণে এর উপাদানে বৈচিত্র্য দেখা যায়; কেউ কেউ এতে সরিষার গুঁড়ো, কর্ন বা এমনকি টক ক্রিমও যোগ করেন। উদাহরণস্বরূপ, সার্বিয়ান রেসিপিগুলিতে প্রায়শই মুরগির বলোগনা বা হ্যামের সঙ্গে আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ডিম এবং ডিল আচার ব্যবহার করা হয়, যা প্রায় ১৫০ গ্রাম করে পরিমাপ করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি দেখায় যে কীভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী পদ স্থানীয় উপকরণ এবং ভোক্তার রুচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, যা বিশ্বজুড়ে এর টিকে থাকার মূল কারণ।
মূল অলিভিয়েরের গোপন মেয়োনেজ নিয়েও জল্পনা রয়েছে; কেউ কেউ মনে করেন এতে সরিষা ও হর্সরাডিশের মিশ্রণ ছিল, আবার কেউ কেউ উমামি স্বাদের জন্য সয়া সসের উপস্থিতির অনুমান করেন। তবে, আধুনিক সংস্করণগুলি মূলত সাধারণ উপাদানগুলির উপর নির্ভরশীল, যা এটিকে একটি তৃপ্তিদায়ক, ক্রিমি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারে পরিণত করেছে। এই সালাদের বিবর্তন কেবল খাদ্যের ইতিহাস নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনেরও একটি সূচক, যা এটিকে মস্কোর অভিজাত ভোজ থেকে বলকান অঞ্চলের পারিবারিক টেবিলে স্থান দিয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে একটি রন্ধনসম্পর্কীয় সৃষ্টি কীভাবে সময়ের স্রোতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, যদিও তার মূল জাঁকজমক হারিয়ে যায়।
10 দৃশ্য
উৎসসমূহ
Dnevnik
TasteAtlas
Wikipedia
The Nosey Chef
Eating European
Folkways Today
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
