ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরে ভাকিটার শাবকের জন্ম: সতর্ক আশার আলো

সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova

২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে, ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের উত্তরাংশে এক অত্যন্ত বিপন্ন সামুদ্রিক শুশুক—ভাকিটার একটি শাবকের জন্ম নথিভুক্ত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণটি যৌথভাবে পরিচালনা করা একটি অভিযানের ফসল। এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল সি শার্পার্ড কনজারভেশন সোসাইটি এবং মেক্সিকোর সরকারি সংস্থাগুলি। এই ঘটনাটি সেই প্রজাতির জন্য এক ঝলক আশার সঞ্চার করেছে, যাদের বন্য জনসংখ্যা বর্তমানে মাত্র সাত থেকে দশটি বলে অনুমান করা হচ্ছে (২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী)। এই পর্যবেক্ষণটি ছিল 'ভাকিটা অবজারভেশন ক্রুজ ২০২১'-এর একটি সফল পরিণতি, যা নিশ্চিত করেছে যে প্রজাতিটি সফলভাবে বংশবৃদ্ধি করছে। এটি পর্যবেক্ষণ চলাকালীন প্রজনন কার্যকলাপ নিশ্চিত হওয়ার পর টানা তৃতীয় বছর।

২০২৫ সালের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযানে বিজ্ঞানীরা দৃশ্যমান এবং শ্রবণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। এর ভিত্তিতে তারা জনসংখ্যা ৭ থেকে ১০টির মধ্যে অনুমান করেন। এই সময়ে কমপক্ষে একটি, এবং সম্ভবত দুটি শাবককে দেখা গিয়েছিল। তুলনামূলকভাবে দেখলে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ছয় থেকে আটটি, এবং ২০২৩ সালে ছিল দশ থেকে তেরোটি। ভাকিটা হলো একটি স্থানীয় প্রজাতি, যা শুধুমাত্র মেক্সিকোর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরের উত্তরাংশে বাস করে। অবৈধভাবে 'তোতোআবা' মাছের জন্য ব্যবহৃত গিলনেট বা ফাঁস-জাল ব্যবহারের কারণে এই প্রজাতিটি প্রায় বিলুপ্তির মুখে। তোতোআবাকে চীনে কালো বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়, বিশেষত তাদের এয়ার ব্লাডারের জন্য।

এই সংরক্ষণ প্রচেষ্টাগুলির সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সচিবালয় (SEMARNAT), জাতীয় সুরক্ষিত অঞ্চল কমিশন (CONANP), এবং মেক্সিকোর নৌবাহিনী (SEMAR)। তারা সি শার্পার্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করছে। পর্যবেক্ষণ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যাকোস্টিক ডিটেক্টর এবং সি শার্পার্ডের মালিকানাধীন জাহাজ, যেমন 'সি হর্স' ও 'বব বেকার' থেকে নেওয়া বিমান চিত্র। এই জাহাজগুলি ব্যবহার করে অবৈধ জাল অপসারণ এবং টহল কার্যক্রম গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে 'অপারেশন ডিফেন্ড ভাকিটা'-এর অংশ হিসেবে চলছে। এই সরাসরি পদক্ষেপ এবং সহযোগিতার ফলস্বরূপ পরিমাপযোগ্য সাফল্য দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, জিরো টলারেন্স জোন (ZTZ)-এ টহলদারি এবং আইন প্রয়োগের মতো ধারাবাহিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবৈধ মাছ ধরার কার্যকলাপ প্রায় ৯৫% হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। ২০২০ সালে প্রবর্তিত এই জিরো টলারেন্স জোন হলো ২০০৫ সালে তৈরি হওয়া অভয়ারণ্যের একটি কঠোরতর অংশ, যেখানে নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মেক্সিকোর পরিবেশ উপ-সচিব মারিনা রোবলস গার্সিয়া উল্লেখ করেছেন যে, যে সকল ভাকিটাকে বহু বছর ধরে দেখা যায়নি, তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে প্রজাতিটি টিকে আছে এবং বংশবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক লক্ষণ।

এই ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও, প্রজাতিটির সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংকটজনক। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০, যা ২০১৮ সালের মধ্যে কমে মাত্র ১০টিতে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালে, অবৈধ শিকার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সিআইটিইএস (CITES) মেক্সিকোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা সরকার একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের পর প্রত্যাহার করে নেয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, কন্যাপেসকা (Conapesca) টেকসই মাছ ধরার কার্যকলাপ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকল্প মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্য ২০০টিরও বেশি অনুমতি প্রদান করেছে। ২০২৪ সালে কোনো জন্মহার নথিভুক্ত না হওয়ার পর, ২০২৫ সালে শাবকের জন্ম হওয়া এই প্রজাতির টিকে থাকার সক্ষমতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, বিশেষত যখন তারা অভূতপূর্ব চাপের মুখে রয়েছে।

উৎসসমূহ

  • The Cool Down

  • SeafoodSource

  • Saving Seafood

  • The Cool Down

  • Mexico Business News

  • Sea Shepherd

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।