লেবাননে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলির নিরস্ত্রীকরণ: শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সম্পাদনা করেছেন: Tatyana Hurynovich
লেবাননের ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলিতে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলির অস্ত্র সমর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা দেশটির শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগটি মে ২০২৫-এর একটি চুক্তির ফলস্বরূপ, যার উদ্দেশ্য হল জাতীয় সেনাবাহিনীর হাতে সমস্ত অস্ত্র কেন্দ্রীভূত করা। তবে, গোষ্ঠীগুলির অনীহা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিশ্চয়তার জন্য চলমান আলোচনার কারণে এই প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলি লেবাননের সেনাবাহিনীর কাছে ব্যক্তিগত রাইফেল, পিস্তল, গ্র্যাড সারফেস-টু-এয়ার রকেট, রকেট-প্রপেলড গ্রেনেড, মেশিন গান এবং হ্যান্ড গ্রেনেড সহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র হস্তান্তর করেছে। এই পদক্ষেপটি লেবাননের জাতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। মার্কিন দূত টমাস ব্যারাক এই নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টাকে "ঐক্য ও স্থিতিশীলতার দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ" হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
লেবাননের রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস মে ২০২৫-এ একটি বৈঠকে এই চুক্তিতে উপনীত হন যে শুধুমাত্র লেবাননের রাষ্ট্রই অস্ত্র ধারণ করবে। এই চুক্তিটি লেবাননের সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রের একচেটিয়াভাবে অস্ত্র ধারণের নীতির উপর জোর দেয়। এই উদ্যোগটি লেবাননের ১২টি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলির অস্ত্রের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার একটি গুরুতর প্রচেষ্টা। তবে, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের মতো গোষ্ঠীগুলি, যারা পিএলও-র অংশ নয়, তারা এখনও তাদের অস্ত্র সমর্পণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
লেবাননে প্রায় ২,২২,০০০ ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে, যাদের অনেকেই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরগুলিতে বাস করে। ঐতিহাসিকভাবে, লেবাননের সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি শিবিরগুলিতে প্রবেশ করে না এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলিই পরিচালনা করে। হিজবুল্লাহ, যা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধের কারণে মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তারা লেবাননের এই নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টাকে "আত্মসমর্পণ" বলে অভিহিত করেছে।
এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াটি লেবাননের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নতুনভাবে সাজানোর একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি হিজবুল্লাহর জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ গত বছরের যুদ্ধে তাদের অনেক শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে চলমান আলোচনার কার্যকারিতা এবং জড়িত ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়গুলির মৌলিক উদ্বেগগুলি মোকাবেলা করার উপর, যা একটি স্থিতিশীল এবং ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর নিশ্চিত করবে। এই প্রক্রিয়াটি লেবাননের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াটি আগস্ট ২০২৫-এর শেষের দিকে শুরু হয়েছিল, বৈরুতের বুর্জ আল-বারাজনেহ শিবির থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। এরপর এটি টায়ারের রশিদিয়া, আল-বাস এবং বুর্জ আল-শামালি শিবিরগুলিতে বিস্তৃত হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ, সিডনের কাছে আইন আল-হিলওয়েহ এবং উত্তর ত্রিপোলির কাছে বেদাওয়ি শিবির থেকে আরও অস্ত্র হস্তান্তর করা হয়। আইন আল-হিলওয়েহ থেকে পাঁচটি ট্রাক অস্ত্র এবং বেদাওয়ি থেকে তিনটি ট্রাক অস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। লেবাননের সেনাবাহিনী এই অস্ত্রগুলি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র, শেল এবং গোলাবারুদ রয়েছে।
উৎসসমূহ
Deutsche Welle
Lebanese troops collect first weapons surrendered in Palestinian camps
Lebanon begins disarmament of Palestinian factions in refugee camps
Lebanese officials announce start of disarming Palestinian camps
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
