গবেষণায় দেখা গেল: পোষা বিড়ালের ডাকের তীব্রতা মালিকের লিঙ্গের ওপর নির্ভরশীল

সম্পাদনা করেছেন: Katerina S.

তুরস্কের বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যা পোষা বিড়ালের ডাকের তীব্রতা এবং তাদের মালিকের লিঙ্গের মধ্যে একটি স্পষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। এই আবিষ্কারটি, যা ইথোলজি (Ethology) নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, মূলত মালিক বাড়ি ফিরলে বিড়ালদের স্বাগত জানানোর জন্য ব্যবহৃত কণ্ঠস্বরের বিশ্লেষণকে কেন্দ্র করে করা হয়েছিল। গবেষণাটি প্রমাণ করে যে মানুষের সঙ্গে বিড়ালের যোগাযোগের ধরনে লিঙ্গভেদে পার্থক্য দেখা যায়।

ডাক্তার কান কেরমান এবং তার গবেষক দল এই স্বাগত জানানোর সময়কার কণ্ঠস্বরের তীব্রতায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করেন। এই পরীক্ষায় মোট ৩১ জন মালিক অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেখা গেল, পুরুষ মালিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বিড়ালরা অনেক বেশি উচ্চস্বরে ডাকছিল। পর্যবেক্ষণের প্রতি ১০০ সেকেন্ডে, পুরুষ মালিকদের প্রতি বিড়ালরা গড়ে প্রায় ৪.৩ বার মিউ মিউ করে ডাকছিল। বিড়ালের জাত বা বয়স যাই হোক না কেন, এই প্রবণতাটি বজায় ছিল। অন্যদিকে, যখন তারা মহিলা মালিকদের স্বাগত জানাচ্ছিল, তখন বিড়ালদের কণ্ঠস্বর ছিল অনেক শান্ত; একই সময়ে তারা গড়ে মাত্র ১.৮ বার ডাকছিল। তবে, অন্যান্য মনোযোগ আকর্ষণের উপায়, যেমন ট্রিলিং, ঘরঘর শব্দ করা বা অঙ্গভঙ্গি—এগুলো মালিকের লিঙ্গের ওপর নির্ভরশীল ছিল না।

ডাক্তার কান কেরমান এই ফলাফলের সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি ধারণা করেন যে বিড়ালরা সহজাতভাবেই পুরুষদের প্রতি তাদের আহ্বানকে আরও জোরালো করে তোলে। তার মতে, পুরুষ শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বা খাদ্য চাওয়ার জন্য সম্ভবত আরও উচ্চমাত্রার সংকেতের প্রয়োজন হয়, কারণ পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বিড়ালের সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গি বা ইঙ্গিত বুঝতে কম পারদর্শী হতে পারে। এর বিপরীতে, মহিলা মালিকরা প্রায়শই তাদের পোষা প্রাণীদের সঙ্গে আরও সুরেলা কণ্ঠে কথা বলেন এবং তারা বিড়ালের সামান্যতম সংকেতও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। এই কারণে, মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় বিড়ালরা অপেক্ষাকৃত নিচু স্বরে ডাকতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

মিউ মিউ করা বা ডাকা হলো মূলত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম, যা বিড়ালরা তাদের মানসিক অবস্থা প্রকাশ করতে ব্যবহার করে। বন্য পূর্বপুরুষ, যেমন ফেলিস সিলভেস্ট্রিস লাইবিকা (Felis silvestris lybica)-এর তুলনায় গৃহপালিত বিড়ালদের মধ্যে এই কণ্ঠস্বরের ব্যবহার অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। এই বিবর্তন মূলত মানুষের সান্নিধ্যে থাকার ফলেই ঘটেছে।

এই গবেষণাটি বিশেষভাবে তুলে ধরে যে বিড়ালরা প্রতিনিয়ত মানুষের কাছ থেকে আসা সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করছে। তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের জন্য নিজেদের আচরণের কৌশল প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে চলেছে। এটি প্রমাণ করে যে গৃহপালিত বিড়ালদের মধ্যে উচ্চ স্তরের জ্ঞানীয় নমনীয়তা বা কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি বিদ্যমান। তারা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে সিদ্ধহস্ত, যা তাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।

উৎসসমূহ

  • Россия. Регионы

  • Kaan Kerman - Psychology

  • Parade

  • ANIMAL BEHAVIOR & HUMAN-ANIMAL INTERACTIONS RESEARCH GROUP

  • YouTube

  • Podbee

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।