এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে কৌশলগত রেল সংযোগ দ্রুত নির্মাণে ইরান ও তুরস্কের উদ্যোগ

সম্পাদনা করেছেন: Tatyana Hurynovich

এই ছবিটি কেবল প্রদর্শনের জন্য।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান, গত সোমবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে, একটি নতুন যৌথ রেল সংযোগ নির্মাণের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। ইরান এই প্রকল্পটিকে 'মারান্দ–চেস্মেহ-সোরাইয়া ট্রানজিট রেললাইন' নামে অভিহিত করছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো এশিয়া ও ইউরোপীয় মহাদেশের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী একটি প্রধান বাণিজ্য করিডোর তৈরি করা।

পরিকল্পিত এই রেলপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার হবে। এটি ইরানের মারান্দ শহরকে তুরস্কের সীমান্তবর্তী এলাকা আরালিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যার জন্য চেস্মেহ-সোরাইয়া অঞ্চল ব্যবহার করা হবে। ইরানের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। কাজ শেষ হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরান তার ইউরেশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত ভৌগোলিক অবস্থানকে একটি বড় সুবিধা হিসেবে দেখছে। দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দুর্বল হয়ে পড়া অর্থনীতিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে চাঙ্গা করতে চাইছে।

ইরানের পরিবহন মন্ত্রী ফারজানেহ সাদেক পূর্বে জোর দিয়েছিলেন যে এই রেললাইনটি ঐতিহাসিক সিল্ক রুটের দক্ষিণাংশকে এমন এক 'সম্পূর্ণ রেল করিডোরে' রূপান্তরিত করবে যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করবে। তিনি আরও বলেছিলেন যে এই করিডোরটি ন্যূনতম বিরতিতে সব ধরনের পণ্য দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবহনের নিশ্চয়তা দেবে। এই লাইন সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ইরান ও তুরস্কের ট্রানজিট হাব হিসেবে গুরুত্ব বহুলাংশে বাড়বে। এর ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সমুদ্রপথ থেকে স্থলপথের দিকে সরে আসবে। এই উন্নয়ন চীনের বৈশ্বিক উদ্যোগ 'এক বেল্ট, এক রোড' (BRI)-এর সঙ্গেও নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।

তেহরানে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কেবল লজিস্টিকস নয়, বরং বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধাগুলো দূর করার বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে জ্বালানি খাত বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। তুরস্কের সঙ্গে ইরানের বিদ্যমান প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি চুক্তিটি নভেম্বর ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে, এবং ইরান সেই চুক্তি নবায়ন করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে তেহরান ও আঙ্কারার মধ্যেকার সম্পর্ক কেবল পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে গভীরতর হচ্ছে।

অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি, দুই মন্ত্রী আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও ঐকমত্য পোষণ করেন। তারা ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদকে স্থিতিশীলতার জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এছাড়াও, ইরান ঘোষণা করেছে যে তারা তুরস্কের ভান প্রদেশে একটি কনস্যুলেট খুলবে, যা কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। ৩০ নভেম্বর ২০২৫ সালের এই চুক্তিটি দুই বৃহৎ শক্তির বহু-স্তরীয় কৌশলগত ঐক্যের চূড়ান্ত ফসল, যার লক্ষ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং ট্রানজিট ক্ষেত্রে আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।

উৎসসমূহ

  • AW

  • Iran International

  • Kurdistan24

  • Türkiye Today

  • Israel National News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।