২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের পূর্বে মারিয়া কোরি<bos> কোরিনা মাচাদোর প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন

২০২৫ সালের ৬ই ডিসেম্বর, শনিবার, ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরি না মাচাদোর সমর্থনে বিশ্বজুড়ে বহু শহরে সুসংগঠিত গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশগুলি ছিল ৫৮ বছর বয়সী মাচাদোর প্রতি সংহতি প্রকাশের মাধ্যম। তিনি গত ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এই পুরস্কার প্রদানের ঠিক পরেই, অসলোতে ১০ই ডিসেম্বর নির্ধারিত আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আগে এই প্রদর্শনগুলো অনুষ্ঠিত হয়। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছিল যে মাচাদো ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের জন্য নিরলস প্রচেষ্টার’ স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার পেয়েছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন যে এই আন্তর্জাতিক সমর্থন তুলে ধরতে ৮০টিরও বেশি শহরে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

এই ঘটনাপ্রবাহ ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে থাকা তীব্র ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে ঘটে। মাচাদো, যিনি ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে সংক্ষিপ্ত আটকের পর আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছেন, তিনি নিকোলাস মাদুরো সরকারের সরাসরি হুমকি সত্ত্বেও অসলোতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট মাদুরো, যার জুলাই ২০২৪ সালের পুনঃনির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সরকারগুলো অবৈধ ঘোষণা করেছিল, তিনি পূর্বে মাচাদোকে ‘শয়তানী ডাইনি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সামরিক সমাবেশের কারণে, যা মাদুরো সরকার ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। নভেম্বর ২০২৫ নাগাদ, এই অঞ্চলে মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ১৫ হাজারে পৌঁছেছিল, যা বিগত কয়েক দশকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। একই সময়ে, মাদুরো ৪.৫ মিলিয়ন জনগণের মিলিশিয়া সদস্যের সমাবেশ এবং বিশাল সামরিক মহড়ার ঘোষণা দেন।

লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপের প্রধান রাজধানী শহরগুলোতে ব্যাপক সমর্থন প্রদর্শিত হয়। পেরুর রাজধানী লিমায়, অংশগ্রহণকারীরা মাচাদোর প্রতিকৃতি বহন করে ‘মুক্ত ভেনেজুয়েলা’ স্লোগান দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা ভেরোনিকা ডুরান মন্তব্য করেন যে এই পুরস্কার ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নিহত সকল ভেনেজুয়েলীয় এবং রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতিনিধিত্ব করে’। কলম্বিয়ার বোগোটায় সমর্থকরা ধর্মীয় প্রার্থনা সভায় অংশ নেয়। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে প্রায় ৫০০ মানুষ মোবাইল ফোনের আলো ব্যবহার করে একটি অনানুষ্ঠানিক মশাল মিছিলের আয়োজন করে। বুয়েনস আইরেসের সমাবেশে অংশগ্রহণকারী ন্যান্সি হোয়ার জোর দিয়ে বলেন যে নোবেল পুরস্কারটি ‘ভেনেজুয়েলার সমগ্র প্রবাসী সম্প্রদায় এবং ভেনেজুয়েলার ভেতরে থাকা সকল সাহসী মানুষের জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাদের উৎসব’।

মাচাদোর স্বীকৃতির প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক সংকটের গভীরে নিহিত। এই সংকট শুরু হয়েছিল যখন তিনি বিরোধী দলের প্রাইমারিতে জয়লাভ করেও জুলাই ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে বাধাগ্রস্ত হন। তার স্থলাভিষিক্ত, প্রাক্তন কূটনীতিক এডমুন্ডো গঞ্জালেস, ২০২৪ সালের শেষের দিকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর স্পেনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। মাচাদো, যিনি বিশ বছরেরও বেশি আগে গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য সুমাতে (Súmate) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকে ২০২৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান দেয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন, তিনি পূর্বে মাদুরোকে মাদক সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং হোয়াইট হাউস তার গ্রেপ্তারের জন্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

উত্তেজনা বৃদ্ধির মাঝে, ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা প্রতিরোধ এবং দেশকে ‘অরাজক’ করার কৌশল সহ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করছে বলে জানা গেছে। নোবেল ইনস্টিটিউটের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান বার্গ হার্পভিকেন এবং স্বয়ং মাচাদো এই পুরস্কারকে ভেনেজুয়েলার জনগণের বহু বছরের সংগ্রাম ও মর্যাদার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন। মাদুরো যেখানে বিরোধী প্রচেষ্টার বৈধতাকে প্রত্যাখ্যান করছেন, সেখানে মাচাদো ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে সমর্থন চেয়েছেন এবং ক্ষমতায় এলে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অসলোতে মাচাদোর পুরস্কার গ্রহণের ঠিক আগে, এই বিশ্বব্যাপী প্রদর্শনীগুলো ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি এক শক্তিশালী প্রতীকী সমর্থন হিসেবে কাজ করছে।