অ্যান্টার্কটিকার মানচিত্রে ১০৭ হাজার হেক্টর উদ্ভিদের বিস্তারিত চিত্র উন্মোচন
সম্পাদনা করেছেন: An goldy
২০২৫ সালের ডিসেম্বরে বৈজ্ঞানিক মহল অ্যান্টার্কটিকার উদ্ভিদ আচ্ছাদনের এক বিস্তারিত চিত্র হাতে পায়, যা জার্মানির বার্লিন শহরের আয়তনের প্রায় সমান। এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি MapBiomas নামক বৈজ্ঞানিক নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত উপগ্রহ তথ্যের ভিত্তিতে এই সমীক্ষাটি করা হয় এবং প্রথমবারের মতো মহাদেশটির বরফমুক্ত অঞ্চলের একটি সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে। উল্লেখ্য, জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ক্ষেত্রফল প্রায় ৮৯০.৮৫ বর্গ কিলোমিটার, যা এই আবিষ্কৃত উদ্ভিদ আচ্ছাদিত এলাকার বিস্তৃতির সঙ্গে তুলনীয়।
১লা ডিসেম্বর এই তথ্য প্রকাশ করা হয়, যা অ্যান্টার্কটিকা দিবসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই দিনটি ১৯৫৯ সালের সেই চুক্তির বার্ষিকী, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য এই মহাদেশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করেছিল। অ্যান্টার্কটিক গ্রীষ্মকালে দ্রুত বিকশিত হওয়া এই মানচিত্রে চিহ্নিত উদ্ভিদগুলির মধ্যে প্রধানত রয়েছে লাইকেন, মস, স্থলজ শৈবাল এবং ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এই জীবন রূপগুলি সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চল, পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জ এবং বিশেষত অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে কেন্দ্রীভূত, যেখানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয়। তবে, কিছু অত্যন্ত সহনশীল প্রজাতি মহাদেশের অভ্যন্তরের পর্বতমালায় চরম পরিস্থিতিতেও টিকে থাকার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
সামগ্রিকভাবে, অ্যান্টার্কটিকার মোট ক্ষেত্রফল ১.৩৬৬ বিলিয়ন হেক্টর, যার মধ্যে বরফমুক্ত অংশ মাত্র ১ শতাংশের কিছু বেশি। এই বরফমুক্ত এলাকার প্রায় ৫ শতাংশ জুড়ে উদ্ভিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই অঞ্চলে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এই ধরনের বিস্তারিত উদ্ভিজ্জ মানচিত্রায়ন অত্যন্ত জরুরি। বরফমুক্ত এই স্থানগুলি গ্রীষ্মকালে পেঙ্গুইনসহ অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন ও বাসা বাঁধার জন্য অপরিহার্য বাসস্থান সরবরাহ করে থাকে।
মানচিত্রায়ন প্রক্রিয়ার সমন্বয়কারী অধ্যাপক এলিয়ানা ফনসেকা জানিয়েছেন যে এই উদ্ভিজ্জ মানচিত্রটি বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা মূল্যায়ন করতে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। অ্যান্টার্কটিকা বৈশ্বিক তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রক হিসেবে এক মৌলিক ভূমিকা পালন করে, যা দক্ষিণ গোলার্ধের আবহাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। এই ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের গতিশীলতা সম্পর্কে বিস্তারিত মানচিত্রায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদজগতের পরিবর্তনগুলি গভীরভাবে বোঝা সম্ভব, যা বিজ্ঞানীদের জলবায়ু পরিবর্তনের সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি আরও কার্যকরভাবে ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।
আধুনিক গবেষণাগুলি ১০ মিটার রেজোলিউশনের Sentinel-2 উপগ্রহ ব্যবহার করছে, যা পূর্ববর্তী ছোট আকারের মানচিত্রগুলির তুলনায় অনেক ব্যাপক চিত্র প্রদান করে। মেশিন লার্নিং এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে বিশাল ডেটা প্রক্রিয়াকরণের এই পদ্ধতি পরিবেশগত নজরদারির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কিউইউটি (QUT)-এর ডক্টর হুয়ান সান্দিনোর মতো বিজ্ঞানীরা মস এবং লাইকেনকে অ্যান্টার্কটিকার 'চাপের ব্যারোমিটার' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, কারণ উষ্ণায়ন এবং মানুষের কার্যকলাপের প্রতি এরাই প্রথম প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ব্যাপক পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের অবস্থা আরও নির্ভুল ও সাশ্রয়ীভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে, যা এই অনন্য মেরু পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বকে আরও একবার প্রতিষ্ঠা করে।
13 দৃশ্য
উৎসসমূহ
Noticias Ambientales
24 Horas
EFEverde
AMZ EM PAUTA
Agência Brasil
MapBiomas Brasil
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
