আতঙ্কিত পোষা প্রাণীর ব্যবস্থাপনা: পশুচিকিৎসকের পরামর্শ ও পরিবেশগত কৌশল
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
ছুটির মরসুমে বা আতশবাজির সময়ে গৃহপালিত প্রাণী, বিশেষত কুকুর ও বিড়ালের মধ্যে যে তীব্র মানসিক উদ্বেগ দেখা দেয়, তা পশুচিকিৎসা কেন্দ্রগুলির জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাণীরা এই উচ্চ শব্দকে সম্ভাব্য জীবননাশক বিপদ হিসেবে উপলব্ধি করে, যার ফলে তাদের সহজাত আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তারা লুকিয়ে থাকা বা পালিয়ে যাওয়ার মতো আচরণ করে। এই পরিস্থিতিতে, পশুচিকিৎসকরা বাড়িতেই পরিবেশগত সমৃদ্ধির মাধ্যমে একটি শান্ত আশ্রয়স্থল তৈরি করার পরামর্শ দেন, যা এই ধরনের চাপযুক্ত ঘটনার আগেই সম্পন্ন করা উচিত। এই নিরাপদ আশ্রয়স্থলটিতে অবশ্যই উপযুক্ত খেলনা এবং বিড়ালদের জন্য তাক বা স্ক্র্যাচিং পোস্টের মতো প্রাকৃতিক আচরণকে উৎসাহিত করে এমন উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। উপরন্তু, উভয় প্রজাতির প্রাণীদের শান্ত রাখতে ফেরোমোন ডিসপেনসার ব্যবহার করার পরামর্শ ব্যাপকভাবে দেওয়া হয়।
পশুচিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান উল্লেখ করেছেন যে, পোষা প্রাণীর আচরণগত গঠন সাধারণত তাদের জন্মের আট সপ্তাহ পরে শুরু হয় এবং ষোলো সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত চলে, তবে কিছু স্বভাব জন্মগতভাবে তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে যা মালিককে বুঝতে হয়। গভীর ঘুমের ওষুধ ব্যবহারের পরিবর্তে, পেশাদারভাবে নির্ধারিত প্রাকৃতিক বা ভেষজ ওষুধ পরিপূরক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষত বিড়ালদের ক্ষেত্রে, আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা রোধ করতে তাদের যোগাযোগের তথ্যসহ সঠিকভাবে শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শনাক্তকরণের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ একবার প্রাণীটি পালিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
সহায়ক কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে শান্ত প্রকৃতির সঙ্গীত বাজানো অথবা কয়েক মাস ধরে পদ্ধতিগত অবলোপন বা সিস্টেম্যাটিক ডিসেনসিটাইজেশন প্রয়োগ করা। এই ডিসেনসিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় আতশবাজির রেকর্ডিংয়ের সাথে ধীরে ধীরে প্রাণীকে পরিচিত করানো হয় এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে তাদের প্রিয় খাবার বা ইতিবাচক উদ্দীপক ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি প্রাণীর ভয়কে ইতিবাচক অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি, পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। যেমন, কুকুর বা বিড়ালের লালা থেকে মানুষের মধ্যে ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর সংক্রমণ হতে পারে, যা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, কুকুরের মলের মাধ্যমে গোলকৃমি বা হাইডাটিড সিস্টের মতো মারাত্মক রোগ ফুসফুস বা যকৃৎ আক্রমণ করতে পারে। অন্যদিকে, বিড়াল থেকে টক্সোপ্লাজমোসিস নামক পরজীবীঘটিত রোগ গর্ভাবস্থায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি গর্ভপাত বা সন্তানের বিকলাঙ্গতার কারণ হতে পারে।
প্রাণীদের মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য ইন্দ্রিয় ব্যবহার শেখানোও একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে, যা মানুষের প্যানিক অ্যাটাক মোকাবিলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন, কোনো পরিচিত শান্ত স্থানে বসিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে বলা এবং দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ ও স্বাদের মাধ্যমে যন্ত্রণাদায়ক নয় এমন জিনিস চিহ্নিত করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এই ধরনের সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ প্রাণীর ভেতরের রাসায়নিক বা জৈবিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি তাদের আচরণকেও প্রভাবিত করে, যেখানে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা ভয় ও আবেগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। পশুচিকিৎসকরা নিয়মিত টিকা এবং পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেন। পোষা প্রাণীকে নিয়মিত গোসল করানো এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা করানো আবশ্যক।
এছাড়া, পশুচিকিৎসক ডা. মো. আজিজুর রহমান সতর্ক করেছেন যে, হাঁপানি বা অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য রোমশ প্রাণীর চলাচল সীমিত রাখা উচিত এবং শোবার ঘরে তাদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সামগ্রিকভাবে, আতশবাজির কারণে সৃষ্ট উদ্বেগ মোকাবিলা এবং পোষা প্রাণীর সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে মালিকদের সক্রিয় এবং তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
10 দৃশ্য
উৎসসমূহ
Prensa Libre
Prensa Libre
El Universal
La Crónica de Hoy
MSD Animal Health
El Informador
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
