ইসরায়েলি সরকার সম্প্রতি কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত উভয় প্রকার করের হারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। এই আর্থিক পদক্ষেপটি আগামী ২০২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ব্যয় মেটানো এবং দেশের বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা, যা আগামী বছরগুলোতে ১.৫ ট্রিলিয়ন শেকেলে পৌঁছাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
Israel
অর্থ মন্ত্রণালয় এই কর সংস্কারের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে জানিয়েছে যে, বর্তমানে ইসরায়েলের করের হার অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD)-এর গড় হার ২৮% থেকে পিছিয়ে রয়েছে। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, কর্পোরেট করের হার ২৩% থেকে ২৫% এর মধ্যে উন্নীত করা হবে। একই সাথে, ব্যক্তিগত আয়করও বৃদ্ধি পাবে, যার লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ ডলার থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, যদিও কোন নির্দিষ্ট আয়ের স্তরে এই হার প্রযোজ্য হবে তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। এই নীতিগত পরিবর্তনটি এমন একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অধীনে বাজেটকে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে করা হয়েছে, যা ২১শে জুলাইয়ের মধ্যে দেশটির সংসদ, অর্থাৎ নেসেট, অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বর্ধিত করগুলো ২০২৬ সালের বাজেট চক্র থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
রাজস্ব সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেশের বর্তমান আর্থিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে আরও জোরালো হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিগত ১২ মাসের আর্থিক ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪.৯% এ পৌঁছেছিল, এবং ধারণা করা হচ্ছে যে ২০২২ সালের বার্ষিক ঘাটতি জিডিপির ৫.১% এর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। সরকার চলমান সামরিক অভিযানগুলোর অর্থায়ন করছে, যা প্রতিরক্ষা ব্যয়কে আকাশচুম্বী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত নিবিড় সামরিক অভিযানকে সমর্থন করার জন্য অতিরিক্ত ২৮ বিলিয়ন এনআইএস (NIS) যোগ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও আলোকপাত করেছে যে, বিশেষত উচ্চ-প্রযুক্তি খাতে বিদ্যমান প্রণোদনা সুবিধা ভোগ করা বড় কর্পোরেশনগুলো বর্তমানে প্রচলিত গড়ের তুলনায় প্রায় ৪০% কম হারে কর প্রদান করছে। এই নতুন, বিস্তৃত কর বৃদ্ধি এবং খাত-ভিত্তিক সুবিধাগুলোর মধ্যেকার সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, জ্ঞান-ভিত্তিক শিল্পকে উৎসাহিত করার আইনের মতো সুবিধাগুলো, যা ২০২৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, সেগুলোর উপর এই সংস্কারের প্রভাব কেমন হবে তা সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য সংস্কারটি সাবধানে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
২০২২ সালের জন্য অন্যান্য সমসাময়িক সমন্বয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্য সংযোজন কর (VAT) ১৭% থেকে বাড়িয়ে ১৮% করা এবং জাতীয় বীমা অবদানের পরিবর্তন। জমে থাকা কর্পোরেট মুনাফা মোকাবিলার জন্য, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সামনে একটি বিকল্প রাখা হয়েছে: হয় তারা ধরে রাখা আয়ের উপর ২% কর প্রদান করবে, অথবা ২০২২ সালে সেই মুনাফার কমপক্ষে ৫% লভ্যাংশ হিসাবে বিতরণ করবে। এই ব্যবস্থাটি 'ওয়ালেট কোম্পানি' ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে চায়, যা লভ্যাংশ কর এড়াতে আয় ধরে রাখে। ইসরায়েল ট্যাক্স অথরিটির অনুমান অনুযায়ী, এই ধরনের কার্যকলাপের ফলে প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন থেকে ৬ বিলিয়ন এনআইএস লভ্যাংশ কর রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছিল।
একদিকে নিরাপত্তা ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যাপক কর বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে বিনিয়োগ তহবিলের উপর অর্জিত লাভের আয়কর হার ৫০% থেকে প্রায় ২৭%-এ নামিয়ে আনার মতো নির্দিষ্ট কর ছাড়ের এই সহাবস্থান, চলমান সংঘাতের অর্থনৈতিক পরিণতি মোকাবিলা করার সময় ইসরায়েলি সরকারের জটিল আর্থিক ভারসাম্যের চিত্র তুলে ধরে।
