জাপানের ভালুক সংকট: আক্রমণ বৃদ্ধি, নতুন বন্যপ্রাণী আইন এবং প্রযুক্তিগত সমাধান

সম্পাদনা করেছেন: Svetlana Velgush

জাপান বর্তমানে একটি অভূতপূর্ব ভালুক সংকটের সম্মুখীন, যেখানে ভালুকের আক্রমণ ও sightings (দেখা যাওয়া) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করেছে এবং উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান গ্রহণ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎসের অভাব এবং গ্রামীণ এলাকার জনসংখ্যা হ্রাস এই ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুলাই ২০২৫ সালের মধ্যে, জাপানে ৫৫টি ভালুকের আক্রমণ এবং অসংখ্য sightings (দেখা যাওয়া) রিপোর্ট করা হয়েছে। ভালুকগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে শহরাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এই ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে, জাপানি সরকার বন্যপ্রাণী সুরক্ষা, নিয়ন্ত্রণ এবং শিকার ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধন করেছে, যা ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এই সংশোধিত আইন অনুযায়ী, জনবহুল এলাকায় নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভালুক এবং অন্যান্য বিপজ্জনক প্রাণী "জরুরী ভিত্তিতে গুলি করার" অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পূর্বে, এই ধরনের পদক্ষেপের জন্য পুলিশের অনুমোদনের প্রয়োজন হত, কিন্তু এখন মেয়ররা প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দিতে পারবেন। পরিবেশ মন্ত্রক স্থানীয় সরকারগুলিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যেমন বেড়া স্থাপন এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তুকি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালুক আক্রমণের এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওক এবং বিচ গাছের মতো খাদ্য উৎসের অভাব। গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে পরিত্যক্ত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালুকগুলি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এই পরিস্থিতি বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে।

এই সংকট মোকাবেলায় জাপান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত নজরদারি ব্যবস্থা, যা ক্যামেরা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভালুক শনাক্ত করতে এবং তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে সক্ষম, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই AI প্রযুক্তি নির্দিষ্ট ভালুকগুলিকেও শনাক্ত করতে পারে যারা বারবার সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর পাশাপাশি, "দানবীয় নেকড়ে" নামে পরিচিত রোবোটিক প্রতিরোধকগুলিও স্থাপন করা হচ্ছে, যা আলো এবং শব্দের মাধ্যমে ভালুকদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এই প্রযুক্তিগত সমাধানগুলি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া অর্থবছরে ভালুক-সম্পর্কিত ঘটনায় ২১৯ জন আহত এবং ছয়জন নিহত হয়েছেন, যা একটি রেকর্ড। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নতুন আইন এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এই সংকট মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, মানুষের নিরাপত্তা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

উৎসসমূহ

  • Terra Daily

  • The bullish signs from Japan's bear panic

  • Environment Ministry to boost support for local governments facing bear attacks

  • Japan relaxes bear-shooting laws amid rise in attacks

  • New 'Emergency Shooting' Law Enacted as Bear Sightings Spike in Tokyo

  • Video. Japan steps up bear safety measures after recent attacks

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।