জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে এক্সোপ্ল্যানেট WASP-18b-এর প্রথম ত্রিমাত্রিক বায়ুমণ্ডলীয় মানচিত্র তৈরি করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের প্রথম ত্রিমাত্রিক (3D) মানচিত্র তৈরি করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এই যুগান্তকারী কাজটি অতি-উষ্ণ বৃহস্পতি গ্রহ WASP-18b-কে কেন্দ্র করে সম্পন্ন হয়েছে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এর ভর বৃহস্পতির তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগান ওয়াইনার ম্যানসফিল্ড এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেক টার্নার এই গবেষণার সহ-নেতৃত্বে ছিলেন। এই আবিষ্কারটি মহাজাগতিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এক নতুন পথের সূচনা করেছে।

এই অভূতপূর্ব মানচিত্র তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা '3D গ্রহণ ম্যাপিং' বা 'স্পেকট্রোস্কোপিক গ্রহণ ম্যাপিং' নামক একটি অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। এই কৌশলটি গ্রহটি তার মূল নক্ষত্রের আড়ালে চলে যাওয়ার সময় নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আসা সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে। এই পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গ্রহটির বিভিন্ন অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ এবং উচ্চতা জুড়ে তাপমাত্রার বিন্যাস পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন, যা পূর্বে একক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্বি-মাত্রিক মডেলের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল সহযোগী রায়ান চ্যালেঞ্জার উল্লেখ করেছেন যে, এই পদ্ধতিটি এমন এক্সোপ্ল্যানেটগুলিকে চিত্রিত করার সুযোগ দেয় যা তাদের মূল নক্ষত্রের অত্যধিক উজ্জ্বলতার কারণে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়।

প্রাপ্ত ত্রিমাত্রিক মানচিত্রে গ্রহটির দিনের দিকে একটি সুস্পষ্ট কেন্দ্রীয় উষ্ণ স্থান (hotspot) দেখা গেছে, যা একটি শীতল বলয় দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই তাপীয় বিন্যাস ইঙ্গিত দেয় যে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলীয় বায়ুপ্রবাহ তাপকে সমভাবে বিতরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই কেন্দ্রীয় উষ্ণ অঞ্চলে গ্রহটির গড় বায়ুমণ্ডলের তুলনায় জলের বাষ্পের পরিমাণ কম লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এই চরম তাপমাত্রার কারণে উষ্ণতম অঞ্চলে জলের অণুগুলি বিয়োজিত (dissociation) হয়ে যাচ্ছে, যা পূর্বের তাত্ত্বিক পূর্বাভাসকে বাস্তবে প্রমাণিত করেছে। এই প্রক্রিয়াটি দেখায় যে, কিছু মহাজাগতিক পরিবেশে জল তার মৌলিক উপাদানে ভেঙে যেতে পারে।

এই যুগান্তকারী গবেষণাটি ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই উন্নত কৌশলটি দূরবর্তী জগৎগুলির তাপীয় কাঠামো এবং রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা এখন আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশী গ্রহগুলির মতোই অন্যান্য এক্সোপ্ল্যানেটগুলির বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিদ্যা এবং আবহাওয়ার ধরণগুলি বুঝতে সক্ষম হবেন। এই সাফল্য শত শত নিশ্চিত এক্সোপ্ল্যানেটের মধ্যে অন্যান্য 'হট জুপিটার'-এর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরির পথ প্রশস্ত করেছে।