নেটফ্লিক্সে পোলিশ ট্র্যাজেডি: ১৯৯৩ সালের বিপর্যয়ের উপর নির্মিত মেগা-সিরিজ ‘হেভেলিয়াস’ এর প্রিমিয়ার

সম্পাদনা করেছেন: An goldy

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স পাঁচ পর্বের মিনি-সিরিজ ‘হেভেলিয়াস’-এর প্রিমিয়ারের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা ২০২৫ সালের ৫ নভেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে। এই বিশাল পোলিশ নাটকটি ১৯৯৩ সালে ঘটে যাওয়া ‘ইয়ান হেভেলিয়ুস’ ফেরি বিপর্যয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি। পরিচালক ইয়ান হোলোউবেক দর্শকদের সামনে কেবল বাল্টিক সাগরে ৫৫ জন মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পুনর্গঠনই তুলে ধরবেন না, বরং যে কাঠামোগত দুর্বলতাগুলি এই ডুবির কারণ হয়েছিল, সেগুলির গভীরেও প্রবেশ করবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পোল্যান্ডের চলচ্চিত্র জগতে এটি অন্যতম উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই সিরিজের নির্মাণ প্রক্রিয়া ছিল অভূতপূর্ব মাত্রার। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পোল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এর চিত্রগ্রহণ চলে, যার মধ্যে রয়েছে শেচিন, ওয়ারশ এবং স্বিনোউজসি। এছাড়াও, ব্রাসেলসে বিশেষভাবে নির্মিত একটি জল কমপ্লেক্সে শুটিং করা হয়। ঝড়ের দৃশ্যগুলিকে বাস্তবসম্মত রূপ দিতে ৭০০ টন জল ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিশাল আয়োজনে ৩০০০-এরও বেশি অতিরিক্ত শিল্পী এবং ১২০-এরও বেশি চরিত্র অভিনয় করেছে।

গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ১৯৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারির সেই ভয়াবহ যাত্রা, যখন স্বিনোউজসি থেকে ইস্তাদের দিকে যাওয়া জাহাজটি ‘ভেরেনা’ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৬০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত এবং ঢেউয়ের উচ্চতা পাঁচ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। জাহাজডুবি ছাড়াও, এই সিরিজটি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য পরবর্তী বছরগুলিতে চলা দীর্ঘ লড়াইকেও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরে। কাহিনীর কেন্দ্রে রয়েছেন সেই ক্যাপ্টেন, যিনি সেই সময় দায়িত্বে ছিলেন না, এবং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহতদের পরিবারবর্গ। ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে তারা সিস্টেমের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হন।

১৯৭৭ সালে জলে নামা ফেরিটির নিজস্ব ইতিহাসেও অনেক উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে। ‘পোলিশ ওশান লাইনস’-এর মালিকানাধীন এবং ‘ইউরোআফ্রিকা’ দ্বারা পরিচালিত এই জাহাজটি তার পনেরো বছরের কার্যকালে প্রায় ৩০টি গুরুতর দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের আগুন লাগার ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখানো হয়েছে, যার পরে ডেক মেরামতের জন্য প্রায় ৭০ টন কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কংক্রিট জাহাজের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারত। শেষ যাত্রার চার দিন আগেও পেছনের র‍্যাম্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলি মেরামত করা হয়নি।

ফলস্বরূপ, জনসাধারণের কাছে ‘ভাসমান কফিন’ নামে পরিচিত জাহাজটি দুই ঘণ্টার বিলম্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করে, যেখানে ৩৫ জন যাত্রী এবং ২৯ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। এই সিরিজটি বাস্তব সাক্ষ্য এবং আদালতের নথিপত্রের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যা নাটকটিকে একটি তীক্ষ্ণ সামাজিক অনুসন্ধানের রূপ দিয়েছে। ম্যাগডালেনা রুচকা, মিখাল জুরাভস্কি এবং ক্যাপ্টেন উলাসেভিচের ভূমিকায় বরিস শিৎস সহ অন্যান্য অভিনেতাদের কাস্ট করা হয়েছে। তাদের কাজ হলো বরফ-ঠান্ডা জলে (তাপমাত্রা প্রায় ২ °C) বেঁচে থাকার লড়াই থেকে শুরু করে প্রিয়জনদের শোক ও দৃঢ় সংকল্পের মতো সমস্ত আবেগ ফুটিয়ে তোলা।

উৎসসমূহ

  • Deadline

  • Netflix Official Site

  • Heweliusz - Wikipedia

  • The Week - 'Heweliusz' Miniseries

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।