পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পারুনা সংরক্ষণাগারে অত্যন্ত বিপন্ন ড্রোসেরা সিলভিকোলার সমৃদ্ধ জনসংখ্যা আবিষ্কৃত
সম্পাদনা করেছেন: An goldy
২০২৫ সালের শেষভাগে, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জারাহ বনে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। এখানে অত্যন্ত বিরল প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ ড্রোসেরা সিলভিকোলা (Drosera silvicola)-এর একটি বিশাল সমাবেশ চিহ্নিত করা গেছে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য, সংরক্ষণ ও আকর্ষণ বিভাগ (DBCA) এই প্রজাতিটিকে 'অগ্রাধিকার ১' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, যার অর্থ হলো এটি 'অত্যন্ত বিরল এবং সম্ভবত বিপন্ন, যার সম্পূর্ণ সংরক্ষণের মূল্যায়ন জরুরি'। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রজাতিটিকে গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেখা যায়নি।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি অস্ট্রেলিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেন্সি (AWC)-এর একটি সুপরিকল্পিত অনুসন্ধানের ফল। অনুসন্ধান দলটি তাদের নিজস্ব সুরক্ষিত এলাকা, পার্থের পূর্বে অবস্থিত পারুনা ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভে এই উদ্ভিদ খুঁজে পায়। পূর্বে, ডি. সিলভিকোলা শুধুমাত্র দুটি দুর্বল জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিচিত ছিল, এবং এই দুটি স্থানই সক্রিয় খনি কার্যক্রমের কাছাকাছি অবস্থিত ছিল। কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাংসাশী উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, এই নতুন স্থানটি, যা শৈলশিরা এবং ঢালু অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে বনের পাতা বা আবর্জনা খুবই কম। তিনি এটিকে এই প্রজাতির জন্য 'আদর্শ পরিবেশ' বলে অভিহিত করেছেন।
পারুনা সংরক্ষণাগারের মতো একটি সুরক্ষিত প্রাকৃতিক পরিবেশে এই সমৃদ্ধ জনসংখ্যা খুঁজে পাওয়া প্রজাতিটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আবিষ্কারের আগে, অর্থাৎ ২০২৫ সালের আগে, ডি. সিলভিকোলার পরিচিত দুটি গোষ্ঠী পারুনা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এর মধ্যে একটি গোষ্ঠী খনি সংস্থার জমিতে এবং অন্যটি সক্রিয় খনি এলাকায় থাকায় তারা চরম ঝুঁকিতে ছিল। AWC-এর আঞ্চলিক বাস্তুবিদ এই সুরক্ষিত অঞ্চলে এমন একটি সুস্থ জনসংখ্যা খুঁজে পাওয়াকে 'সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক বিশাল সাফল্য' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যে জারাহ বনভূমিতে এই আবিষ্কারটি হয়েছে, সেটি বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে, বক্সাইট উত্তোলনের কারণে বনভূমি খণ্ডিত হওয়ার মতো গুরুতর হুমকির সম্মুখীন এই অঞ্চল। 'হাজার কাটার' নামক একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বন উজাড় হওয়ার ৬২.৫% কারণ ছিল এই খনি কার্যক্রম। ড্রোসেরা সিলভিকোলা হলো একটি বহুবর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ, যা সাধারণত ০.০৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর খোলা রোজেটটি ০.০৩ মিটার পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। এটি নভেম্বরে ল্যাটেরাইট নুড়িযুক্ত মাটিতে ফুল ফোটায়। গবেষকরা আরও পাঁচটি ড্রোসেরা প্রজাতি রেকর্ড করেছেন, যার মধ্যে পারুনা এবং অ্যাভন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের স্থানীয় প্রজাতি ড্রোসেরা ওয়ালিউঙ্গা (Drosera walyunga) উল্লেখযোগ্য।
১০ জন বিজ্ঞানী ও স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে গঠিত দলের এই অভিযান প্রমাণ করে যে, মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির জনবসতি টিকে থাকতে পারে। এই আবিষ্কার অস্ট্রেলিয়ার অনন্য উদ্ভিদকুলকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সংরক্ষিত অঞ্চলগুলির অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরে। একইসাথে, এটি এই অঞ্চলের অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতিদের সুরক্ষার জন্য আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। এই সাফল্য যেন এক নতুন আশার আলো দেখায়।
13 দৃশ্য
উৎসসমূহ
KOMPAS.com
IFLScience
PerthNow
Wikipedia
Empower Stories - Eco News
Western Australian Naturalists Club
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
