নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীনের বিটকয়েন হ্যাশরেটের ১৪% পুনরুদ্ধার: এক অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চীনে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং-এর ওপর দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও, বিটকয়েন নেটওয়ার্কে দেশটির গণনা ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে ফিরে এসেছে। হ্যাশরেট ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থান পুনরুদ্ধার করেছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট হ্যাশরেটের প্রায় ১৪% দখলে রেখেছে। এই গোপন পুনরুত্থান শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের শেষ দিকে ব্যক্তিগত মাইনারদের কার্যক্রম পুনরায় চালুর মাধ্যমে। এর পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে সেইসব অঞ্চলে বিপুল পরিমাণে অব্যবহৃত শক্তির সহজলভ্যতা, যেখানে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।

এই ভূগর্ভস্থ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো সস্তা, অব্যবহৃত বিদ্যুতের প্রাচুর্য, বিশেষ করে জিনজিয়াং-এর মতো প্রদেশগুলিতে। জিনজিয়াং-এর একজন ব্যক্তিগত মাইনার ওয়াং নিশ্চিত করেছেন যে যে অতিরিক্ত শক্তি সহজে রপ্তানি করা সম্ভব নয়, তা ক্রিপ্টো মাইনিংয়ের মাধ্যমে নগদীকরণ করা হচ্ছে, এবং এই অঞ্চলে নতুন প্রকল্প নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ক্রিপ্টোকোয়ান্টের বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন যে এই কার্যক্রমগুলির গোপন প্রকৃতির কারণে চীনের প্রকৃত মাইনিং অংশ ১৫% থেকে ২০% পর্যন্ত হতে পারে। এই প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৭.৭৫% (১৪৫ এক্সাহ্যাশ প্রতি সেকেন্ড) নিয়ে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে এবং রাশিয়া ১৫.৫১% (১৬০ এক্সাহ্যাশ প্রতি সেকেন্ড) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সম্মিলিতভাবে, এই তিনটি দেশ বিশ্বব্যাপী মোট গণনা ক্ষমতার ৬৭%-এরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই প্রত্যাবর্তনে অবকাঠামোগত দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পূর্ববর্তী প্রযুক্তিগত উত্থানের পর অব্যবহৃত ডেটা সেন্টারগুলির অতিরিক্ত ক্ষমতা মাইনারদের জন্য শীতলীকরণ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত অবকাঠামো সরবরাহ করছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হওয়ায়, ক্ষতিপূরণ দিতে এই সরঞ্জামগুলি ভাড়া দিচ্ছে বা ছাড়ে বিক্রি করছে, যা অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপকে উৎসাহিত করছে। মাইনিং সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক Canaan Inc. এই প্রবণতাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করে: তাদের বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ে চীনের অংশীদারিত্ব ২০২২ সালে মাত্র ২.৮% থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৩০.৩% হয়েছে, এবং ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই হার ৫০% ছাড়িয়ে গেছে।

বাজারের পরিস্থিতিও কার্যকলাপের এই নবজাগরণে সহায়ক হয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ১২৬,০০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল, যা মাইনিংকে অত্যন্ত লাভজনক করে তুলেছিল, যদিও নভেম্বরের শেষ নাগাদ এটি প্রায় ৩১% কমে ৮৬,৫০০ ডলারে নেমে আসে। Perpetuals.com-এর সিইও প্যাট্রিক গ্রুন চীনা মাইনিং-এর এই প্রত্যাবর্তনকে 'গত কয়েক বছরে বাজারের দেখা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংকেত' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে বেইজিং-এর নীতির সম্ভাব্য শিথিলতার সামান্য ইঙ্গিতও বিটকয়েনকে একটি বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে সমর্থন করতে পারে।

এই ঘটনা নিয়ন্ত্রকদের সামনে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে: বেইজিং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী করবে—মাইনিং-এর প্রতি সহনশীলতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেবে নাকি কঠোর আইন প্রয়োগ পুনরায় শুরু করবে? একই সময়ে, বৃহত্তর আর্থিক প্রেক্ষাপটে, হংকং ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে স্টেবলকয়েন আইন কার্যকর করেছে, এবং বেইজিং ইউয়ান-সমর্থিত স্টেবলকয়েনগুলির জন্য একটি রোডম্যাপ বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে, যা ডিজিটাল সম্পদগুলিকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সতর্কতার সাথে একীভূত করার ইঙ্গিত দিতে পারে। তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন—এই তিনটি দেশের হাতে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি হ্যাশরেট কেন্দ্রীভূত থাকাটা বিটকয়েনের মৌলিক বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে প্রশ্ন জিইয়ে রাখছে।