জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেপুল গাজা শহরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এটিকে 'সম্পূর্ণ ভুল' বলে অভিহিত করেছেন। সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ডের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার গুরুত্বের উপর জোর দেন। ওয়াডেপুল ইসরায়েলি সরকার এবং হামাসের সাথে যোগাযোগকারীদের সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিবর্তে এই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজা শহরে শুরু হওয়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পরিচালিত এই সামরিক অভিযানকে একটি 'বিপজ্জনক যুদ্ধাঞ্চল' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মানবিক সহায়তা সরবরাহের জন্য কৌশলগত বিরতি স্থগিত করা হয়েছে। এই অভিযানের ফলে অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের মতো মানবিক সংস্থাগুলো বাসিন্দাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে, যেখানে হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ নিউ ইয়র্ক ঘোষণা গ্রহণ করেছে, যেখানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানানো হয়েছে এবং হামাসকে স্পষ্টভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণায় হামাসের বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং গাজায় হামাসের কর্তৃত্ব অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা সংঘাতের উত্তেজনা কমাতে লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুত সংঘাত বন্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সমাধানের জন্য আলোচনায় ফিরে আসার আশা করছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় জীবনধারণের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ১৪ মাস ধরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর বারবার হামলা, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভেঙে পড়া এবং মানবিক সহায়তার পদ্ধতিগত অস্বীকৃতি দেখা যাচ্ছে। এই সংস্থাটি জীবন বাঁচানো এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে যে গত চার দিনে গাজা শহরে তাদের ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি স্কুল এবং দুটি ক্লিনিক রয়েছে যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। প্রায় ৭০,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের একটি তদন্তে দেখা গেছে যে ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের গাজা যুদ্ধ গণহত্যা। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা কাতারের রাজধানী দোহায় মিলিত হয়েছেন এবং গাজায় ইসরায়েলের 'গণহত্যা' এবং কাতারের উপর ইসরায়েলের 'কাপুরুষোচিত' হামলার নিন্দা করেছেন।
এই সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর এবং গাজা শাসন করবে। জার্মানি এবং ইতালি এখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।