ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে নিরাপদ ও সহজলভ্য গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে 'মাই ভয়েস, মাই চয়েস: ফর সেফ অ্যান্ড অ্যাক্সেসিবল অ্যাবরশন' নামক একটি নাগরিক উদ্যোগ ইউরোপীয় কমিশনের সাথে একটি ফলপ্রসূ আলোচনায় মিলিত হয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে, ইইউ জুড়ে গর্ভপাত পরিষেবাগুলির জন্য একটি আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই উদ্যোগটি ২০২৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল এবং ১৯টি সদস্য রাষ্ট্র থেকে ১.১২ মিলিয়নেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো একটি স্বেচ্ছাসেবী ইইউ আর্থিক সহায়তা কাঠামো তৈরি করা। এর মাধ্যমে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই ব্যবস্থায় যোগদানের সুযোগ পাবে এবং যারা কঠোর আইন বা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে গর্ভপাত করাতে বাইরে যেতে চান, তাদের খরচ বহন করতে পারবে। পোল্যান্ড এবং মাল্টার মতো দেশগুলিতে গর্ভপাতের উপর কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, যেখানে এটি প্রায় অসম্ভব বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও ২০২৩ সালে মাল্টায় এমন সংশোধনী আনা হয়েছে যা গর্ভবতী মহিলার জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য চিকিৎসা হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয়, এমনকি যদি এর ফলে গর্ভপাতও হয়।
ইউরোপীয় কমিশন বর্তমানে এই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে এবং ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রস্তাবের ফলাফল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রজনন অধিকার এবং গর্ভপাত পরিষেবার সহজলভ্যতার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। 'মাই ভয়েস, মাই চয়েস' উদ্যোগটি কেবল একটি আবেদন নয়, এটি একটি প্রস্তাব যা ইউরোপীয় কমিশন বর্তমানে বিবেচনা করছে।
এই প্রচারণার মাধ্যমে ইউরোপকে আরও ন্যায্য, মুক্ত এবং সমান করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি স্বীকার করা হয়েছে যে, গর্ভপাতের সুযোগের অভাব কেবল নারীদের শারীরিক ঝুঁকির মধ্যেই ফেলে না, বরং অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপও সৃষ্টি করে, বিশেষ করে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর। ইউরোপীয় পার্লামেন্টও যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (SRHR) নিয়ে কাজ করছে এবং গর্ভপাতকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও কিছু দেশ, যেমন পোল্যান্ড এবং মাল্টা, গর্ভপাত আইনের ক্ষেত্রে কঠোরতা বজায় রেখেছে, সেখানেও মানবাধিকার সংস্থাগুলি নারীদের স্বাস্থ্য ও জীবনের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই উদ্যোগটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সংহতি এবং নারীর অধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের একটি প্রতিফলন। এটি একটি বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ যা নিশ্চিত করতে চায় যে, ইউরোপের সকল নারী, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে, নিরাপদ এবং আইনসম্মত গর্ভপাত পরিষেবার সুযোগ পান।