আরব রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা পরিষদ (GCC) একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা ২০২৫ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের মধ্যে কার্যকর হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে 'জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরস ভিসা' নামে একটি সমন্বিত পর্যটন ভিসা চালু করা হচ্ছে। এই ভিসা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমান – এই ছয়টি দেশকে একটি একক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে একীভূত করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি ও পর্যটন মন্ত্রী, আব্দুল্লাহ বিন তৌক আল মারি, এই ভিসার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে এই সমন্বিত ভিসা আঞ্চলিক একীকরণের একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলকে একটি সম্মিলিত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। নতুন এই ভিসার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা একটি মাত্র ভিসার আবেদন করেই এই অঞ্চলের একাধিক দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এই সরলীকৃত প্রক্রিয়া পর্যটকদের জন্য ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা এবং ভ্রমণ ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে। পূর্বে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা ভিসার প্রয়োজন হতো, যা ভ্রমণকে আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তুলত।
'জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরস ভিসা' চালু হলে সদস্য দেশগুলোতে পর্যটন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সমন্বিত পর্যটন ভিসা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। পর্যটকেরা এখন 'দুবাই থেকে মাস্কাট' বা 'রিয়াদ থেকে দোহা'-র মতো একাধিক দেশের ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজেই করতে পারবেন। এর ফলে এই অঞ্চলে পর্যটকদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং আতিথেয়তা খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিসিসি দেশগুলোতে পর্যটন খাতে ব্যয় প্রায় ১৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এই সমন্বিত ভিসা ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি দেশকেই সংযুক্ত করার পরিকল্পিত প্রায় ২১১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মতো অন্যান্য যৌথ প্রকল্পগুলির উন্নয়নেও সহায়তা করতে পারে। এর নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই চলছে এবং ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। জিসিসি গ্র্যান্ড ট্যুরস ভিসার সূচনা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের পর্যটন খাতের একীকরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগটি ইউরোপের শেনজেন ভিসার অনুরূপ, যা দেশগুলোর মধ্যে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে। এই ভিসা চালু হলে তা কেবল পর্যটকদের জন্যই সুবিধাজনক হবে না, বরং আঞ্চলিক অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে। এটি বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ককেও উন্নত করবে।
২০২৫ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের মধ্যে এই ভিসা ব্যবস্থা চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভিসা পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি আতিথেয়তা, বিমান চলাচল, খুচরা ব্যবসা এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণীয় স্থানগুলিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে হোটেল দখলের হার ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে কম পরিচিত শহরগুলিতে। এই সমন্বিত ভিসা ব্যবস্থা আঞ্চলিক পর্যটনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
যদিও ভিসার সঠিক খরচ এবং মেয়াদ এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে এটি সম্ভবত ৩০ থেকে ৯০ দিনের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে উপলব্ধ হবে।