৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে, চীন তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (ADIZ) ২০টিরও বেশি সামরিক বিমান, যার মধ্যে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন অন্তর্ভুক্ত, মোতায়েন করেছে। এই বিমানগুলির মধ্যে ১৭টি তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা অতিক্রম করে তাইওয়ানের ADIZ-এ প্রবেশ করে "যৌথ যুদ্ধ প্রস্তুতি মহড়া" পরিচালনা করে। এই ঘটনাটি তাইওয়ানের জাতীয় দিবসের মাত্র কয়েক দিন আগে ঘটে এবং তাইপেই ও বেইজিংয়ের মধ্যে জাতিসংঘের প্রস্তাব ২৭৫৮-এর ব্যাখ্যা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। চীন এই প্রস্তাবটিকে তাইওয়ানের উপর তাদের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি হিসেবে দাবি করে, যা তাইওয়ান দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই মহড়ায় জে-১৬ যুদ্ধবিমান, জেএইচ-৭ ফাইটার-বোমারু বিমান, কেজে-৫০০ প্রাথমিক সতর্কতা বিমান এবং ড্রোন অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে এবং উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে বিমান, জাহাজ এবং ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
তাইওয়ানের জনসংখ্যা প্রায় ২৩ মিলিয়ন এবং জাতিসংঘের ২৭৫৮ প্রস্তাবটি ১৯৭১ সালে গৃহীত হয়েছিল। বেইজিংয়ের মতে, জাতিসংঘের প্রস্তাব ২৭৫৮ তাইওয়ানের উপর তাদের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে, তাইপেই এই ব্যাখ্যাকে "বিকৃতি" হিসেবে অভিহিত করেছে, যা "ভবিষ্যতে সশস্ত্র আগ্রাসনের জন্য একটি কাল্পনিক আইনি ভিত্তি" তৈরি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনের অবস্থানকে খণ্ডন করে বলেছে যে, জাতিসংঘের প্রস্তাব ২৭৫৮-এ তাইওয়ানের উল্লেখ নেই এবং এটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে জাতিসংঘে তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার দেয় না। তাইওয়ান একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ হিসেবে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই ঘটনাটি তাইওয়ান প্রণালীতে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘের প্রস্তাব ২৭৫৮ নিয়ে বিতর্ক তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। চীন প্রস্তাবটির একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ব্যবহার করে তাদের দাবিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, যা তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক শাসন এবং স্বশাসনের অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘের প্রস্তাব ২৭৫৮, যা ১৯৭১ সালে গৃহীত হয়েছিল, মূলত জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সমাধান করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন পক্ষ স্পষ্ট করেছে যে, এই প্রস্তাবে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব বা আন্তর্জাতিক মর্যাদা সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। তবে, চীন এই প্রস্তাবটিকে তাদের "এক চীন নীতি"-র সমর্থনে ব্যবহার করে আসছে, যা তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণকে সীমিত করার একটি প্রচেষ্টা।
তাইওয়ানের জাতীয় দিবস, যা ১০ই অক্টোবর পালিত হয়, ১৯১১ সালের উহুং বিদ্রোহের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়, যা কিং রাজবংশের পতন এবং চীন প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছিল। এই দিবসটি তাইওয়ানের জাতীয় পরিচয় এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রতীক। তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখা, যা মার্কিন বিমান বাহিনীর জেনারেল বেঞ্জামিন ও. ডেভিস জুনিয়র ১৯৫৫ সালে এঁকেছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক সীমানা হিসেবে কাজ করত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন এই মধ্যরেখা অতিক্রম করার ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে, যা উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ২০২০ সালে, চীনা সামরিক বিমানগুলি ৪৯ বার মধ্যরেখা অতিক্রম করেছিল, যা ১৯৯০ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল। এই ঘটনাগুলি তাইওয়ান প্রণালীর নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাইওয়ান তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইছে। অন্যদিকে, চীন তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে চলেছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।