জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের পক্ষে প্রস্তাব অনুমোদন: বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের স্বীকৃতি এবং গাজার মানবিক সংকট ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ১৪২টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যেখানে ১০টি দেশ বিরোধিতা করেছে এবং ১২টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) সমস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে এবং অবিলম্বে গাজা যুদ্ধবিরতির পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনিক কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে। এটি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের সহায়তায় একটি মিশন প্রেরণেরও প্রস্তাব করেছে, যা যুদ্ধবিরতি এবং ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে।

প্রস্তাবটিতে ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিক ও অবকাঠামোর উপর হামলা, অবরোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় ও সুরক্ষা সংকটের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। এটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে এবং অবৈধ একতরফা পদক্ষেপগুলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বাস্তবায়নকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে জানিয়েছে। বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা আশা করছে যে ইতিমধ্যে স্বীকৃত ১৪৫টিরও বেশি দেশের পাশাপাশি আরও অন্তত ১০টি দেশ তাদের সমর্থন জানাবে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের পক্ষে সমর্থন আরও জোরদার করেছে।

সৌদি আরব এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলো এই প্রস্তাবকে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তবে, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবকে একতরফা এবং শান্তি আলোচনার জন্য ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চান না এবং এই অঞ্চলটি "আমাদের"। ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি ড্যানন এটিকে "অসার অঙ্গভঙ্গি" এবং "রাজনৈতিক সার্কাস" বলে অভিহিত করেছেন যা জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ দূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন যে এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে এবং ইসরায়েলকে যুক্তিসঙ্গত পথে চলতে উৎসাহিত করবে।

গাজার মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাও এই প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামাস হামলার পর থেকে ইসরায়েলের অভিযানে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬৪,৭১৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৬৩,৮৫৯ জন আহত হয়েছে। গাজার খাদ্য মন্ত্রণালয় একটি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে ২১ লক্ষাধিক মানুষ চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। এই মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এই প্রস্তাবটি যদিও বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক বার্তা বহন করে। এটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রয়োজনীয়তা এবং গাজায় গুরুতর মানবিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর উদ্বেগকে তুলে ধরে। তবে, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান দেশগুলোর বিরোধিতা এই সংঘাতের সমাধানে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে স্পষ্ট করে তোলে। বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি শান্তি আলোচনার পথকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন পথের সন্ধান করছে। এই প্রস্তাবটি সেই বৃহত্তর প্রচেষ্টার একটি অংশ, যা সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবেলা এবং একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত যা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষাকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

আরও তথ্য:

  • হামাসের হামলা: ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে।

  • গাজার হতাহতের সংখ্যা: ইসরায়েলের অভিযানে গাজায় ৬৪,৭১৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৬৩,৮৫৯ জন আহত হয়েছে।

  • আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: ১৪৫টিরও বেশি দেশ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

  • ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকা: বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এই ঘটনাটি একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হবে। এটি বিশ্বজুড়ে শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য চলমান আলোচনা এবং প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

উৎসসমূহ

  • euronews

  • Action by UN System and Intergovernmental Organizations Relevant to the Question of Palestine (December 2024 Monthly Bulletin)

  • At Emergency Special Session, General Assembly Overwhelmingly Backs Membership of Palestine to United Nations, Urges Security Council Support Bid

  • General Assembly Mulls Over Resolution Demanding End of Israel’s Occupation of Palestinian Land within 12 Months – press release

  • General Assembly Adopts Three Resolutions to Advance Middle East Peace, Two-State Solution

  • Admission of new Members to the United Nations - General Assembly Resolution (A/RES/ES-10/23)

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।