মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক আগে, শনিবার চিন সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ আমদানি সংক্রান্ত দুটি তদন্ত শুরু করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অ্যানালগ ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) চিপের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তে মূলত কমোডিটি ইন্টারফেস চিপ এবং গেট ড্রাইভার চিপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টস এবং অন সেমিকন্ডাক্টরের মতো মার্কিন সংস্থাগুলি দ্বারা উৎপাদিত হয়।
এর পাশাপাশি, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের চিপ শিল্পের প্রতি "বৈষম্যমূলক" আচরণের অভিযোগ এনে একটি পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। আগামী রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত মাদ্রিদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং উপস্থিত থাকবেন।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের আমদানি পরিমাণ ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু একই সময়ে আমদানি মূল্য ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তাদের অভিযোগ, এর ফলে দেশীয় পণ্যের বিক্রয় মূল্য হ্রাস পেয়েছে এবং দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তদন্তগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুক্রবারের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয়েছে, যেখানে তারা ২৩টি চীনা কোম্পানিকে "এনটিটি লিস্টে" অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই তালিকায় এমন দুটি চীনা কোম্পানিও রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রধান চীনা চিপ প্রস্তুতকারক এস এম আই সি (SMIC)-এর জন্য চিপ তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে, জেনেভা, লন্ডন এবং স্টকহোমে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উভয় দেশ একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি স্থগিত রাখার জন্য ৯০ দিনের বিরতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছে। তবে, সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে বিরোধ উভয় দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি প্রধান বিভেদ রেখা হিসেবে রয়ে গেছে।
এই তদন্তগুলি এবং আসন্ন বৈঠকগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তুলে ধরেছে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে। এই ঘটনা বিশ্ব প্রযুক্তি এবং জাতীয় নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলবে।