জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির মর্যাদার বিবর্তনকে নির্দেশ করে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ নাগাদ, ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা জাতিসংঘের মোট সদস্যের প্রায় ৭৬%। এই ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উন্নয়ন।
ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পর্যবেক্ষক মর্যাদা লাভ করে এবং ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার পর জাতিসংঘ "ফিলিস্তিন" নামটি ব্যবহার করতে শুরু করে। ২০১২ সালে, ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি 'অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র' (non-member observer state) হিসেবে মর্যাদা লাভ করে, যা দেশটির কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। মে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে 'অতিরিক্ত অধিকার ও সুবিধা' প্রদান করে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে এর পূর্ণ সদস্যপদ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফ্রান্স ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা একটি পশ্চিমা দেশের কাছ থেকে প্রথম এমন স্বীকৃতি হতে পারে। যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও অনুরূপ স্বীকৃতির পরিকল্পনা করেছে, যদিও কিছু শর্তাবলী প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি নির্ভর করছে ইসরায়েল গাজার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে এবং পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব বন্ধ করে কিনা তার উপর। বেলজিয়ামও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
এই কূটনৈতিক তৎপরতাগুলো 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান' (two-state solution) অর্জনের প্রচেষ্টার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জুন ২০২৫ সালে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অগ্রগতিতে মনোনিবেশ করেছিল। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু প্রধান দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি সমঝোতামূলক শান্তি চুক্তির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
মোটকথা, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিরসনে একটি নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।