২০২৫ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর, রিয়াদে পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি যুগান্তকারী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিটি উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যৌথ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
এই ঐতিহাসিক চুক্তির অধীনে, পাকিস্তান ও সৌদি আরব ঘোষণা করেছে যে কোনো একটি দেশের উপর আক্রমণ হলে অন্য দেশটি সেটিকে নিজেদের উপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করবে। এটি একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার গভীরতাকে নির্দেশ করে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এই চুক্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা এই চুক্তির আওতায় "সম্পূর্ণরূপে" অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ১৯৯৮ সাল থেকে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতার অবস্থান "কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ" ছিল না।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ রিয়াদে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের যৌথ অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই চুক্তিটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিক উন্নত করার এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এই চুক্তিকে একটি "ছাতা" চুক্তির মতো কাজ করবে বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে যেকোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা যৌথভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বহু দশক ধরে বিদ্যমান। ১৯৬০-এর দশক থেকে এই সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, যখন পাকিস্তান সৌদি আরবকে প্রশিক্ষণ ও উপদেষ্টা সহায়তা প্রদান করত। এই দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার পর আরও শক্তিশালী হয়েছে, যা পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে একটি "মাইলফলক" হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তানের মতো একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের উপর নির্ভরতা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে এই পারমাণবিক সক্ষমতার অন্তর্ভুক্তি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমীকরণে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। এই চুক্তিটি কেবল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করবে না, বরং এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই চুক্তির প্রভাব নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে, কারণ এটি আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই চুক্তিতে অন্যান্য আরব দেশগুলির অন্তর্ভুক্তির জন্য "দরজা বন্ধ নেই", যা জোটের সম্ভাব্য সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়।