পাকিস্তান ও কাজাখস্তান তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার করেছে। উভয় দেশ বাণিজ্য, শিল্প সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার উপর জোর দিয়েছে, যার লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য উভয় দেশ একটি যৌথ কর্মপরিকল্পনা (২০২৫-২০২৬) স্বাক্ষর করেছে।
ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রী জাম কামাল খান এবং কাজাখস্তানের বাণিজ্য ও একীকরণ মন্ত্রী আরমান শাক্কালিয়েভ এই বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে যে বর্তমান বাণিজ্য তাদের সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তারা রপ্তানি বৃদ্ধি, শিল্প বৈচিত্র্যকরণ এবং বাণিজ্য বাধা দূর করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কৃষি ও চামড়া শিল্পে সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কাজাখস্তান পাকিস্তান সরবরাহ করার জন্য শস্য, আখ এবং সূর্যমুখী তেলের মতো কৃষিপণ্যের একটি শক্তিশালী রপ্তানি ভিত্তি তৈরি করেছে, যা সাম্প্রতিক বন্যা-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, পাকিস্তান চামড়া প্রক্রিয়াকরণে তার দক্ষতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। কাজাখস্তানের চামড়া সমিতি এবং পাকিস্তানের ট্যানারি সমিতি এই অংশীদারিত্বকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে।
পরিবহন ও লজিস্টিকস খাতেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক বাণিজ্য করিডোর, বিশেষ করে কাজাখস্তান-তুর্কমেনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান এবং কাজাখস্তান-উজবেকিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান রুটের উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের বন্দরগুলির মাধ্যমে কাজাখস্তানের পণ্য পরিবহনের জন্য একটি ট্রানজিট বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে, যা মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য প্রবাহকে সহজতর করবে। উভয় দেশ লজিস্টিকস কোম্পানিগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সীমান্তজুড়ে পণ্য পরিবহনের জন্য যৌথ উদ্যোগ বিকাশের পরিকল্পনা করছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য উভয় দেশ যৌথ প্রদর্শনী, বাণিজ্য মিশন এবং ব্যবসায়িক-থেকে-ব্যবসায়িক (B2B) সভার আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে। সম্প্রতি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-কাজাখস্তান ব্যবসায়িক ফোরামে দুই দেশের ২৫০টিরও বেশি পাকিস্তানি এবং ৮০টি কাজাখ কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল। এই ধরনের উদ্যোগ বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভের নভেম্বরের আসন্ন পাকিস্তান সফর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফরকালে বাণিজ্য, সংযোগ এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।