২০২৫ সাল ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে 'বন্ধুত্ব বর্ষ' হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই উদযাপনের অংশ হিসেবে, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লামের আগামী অক্টোবর মাসে পিয়ংইয়ং সফরের কথা রয়েছে। এই সফরটি প্রায় দুই দশক পর কোনো ভিয়েতনামী শীর্ষ নেতার উত্তর কোরিয়া সফর হবে এবং সেখানে তিনি উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান, তবে উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে কোনো সক্রিয় বাণিজ্য সম্পর্ক নেই।
ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৫০ সালের ৩১শে জানুয়ারি স্থাপিত হয়েছিল। এই দীর্ঘ ৭৫ বছরের সম্পর্ককে উদযাপন করতে উভয় দেশই নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এই বছরটিকে 'বন্ধুত্ব বর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুই থান সন এই উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট হো চি মিন এবং প্রেসিডেন্ট কিম ইল সাংয়ের হাতে গড়া এই ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক নানা উত্থান-পতন পেরিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শক্তিশালী হয়েছে। তিনি আরও জোর দেন যে, ভিয়েতনাম উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরও গভীর করতে কাজ করে যাবে, যা এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখবে।
তো লামের এই সম্ভাব্য সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে যখন উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে এবং দেশটির উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। তবে, এই সফরটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, তো লাম এই সফরের পূর্বে আগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন, যেখানে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জে-মিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দক্ষিণ কোরিয়া ভিয়েতনামের একটি প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার, যেখানে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের মতো সংস্থাগুলি ৯০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এই দ্বৈত সফর ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি জটিল ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে, ২০০৭ সালে ভিয়েতনামের তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নং ডাক মানeh পিয়ংইয়ং সফর করেছিলেন, যা ছিল প্রায় দুই দশক আগের ঘটনা। এর আগে, ১৯৫৭ সালে ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হো চি মিন উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন। কিম জং উন সর্বশেষ ২০১৯ সালে হ্যানয় সফর করেছিলেন, যেখানে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য সম্পর্ক বর্তমানে নেই, তবে ভিয়েতনাম উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ২০১৬ সালে ভিয়েতনাম থেকে পিয়ংইয়ং-এ রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সফরটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।