ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন যে, তিনি রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শেষ হওয়ার পর পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। তিনি যুদ্ধের সমাপ্তিকে অন্য কোনো মেয়াদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারেও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তবে এর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, "আমার লক্ষ্য হলো যুদ্ধ শেষ করা।" তার বর্তমান মেয়াদ ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে সামরিক আইন জারি থাকায় নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী, সামরিক আইন চলাকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।
জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেছেন যে, যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবে তিনি সংসদকে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ করবেন। তিনি বলেন, "যদি আমরা রাশিয়ানদের সাথে যুদ্ধ শেষ করি, হ্যাঁ, আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই কারণ এটি আমার লক্ষ্য নয়।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি এই কঠিন সময়ে আমার দেশের সাথে থাকতে চেয়েছি, আমার দেশকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমার লক্ষ্য হলো যুদ্ধ শেষ করা।"
ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, সামরিক আইন প্রত্যাহার করার পর নির্বাচন আয়োজনের জন্য নয় থেকে বারো মাস সময় প্রয়োজন। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির সময়সীমা যুদ্ধের পরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের জটিলতা তুলে ধরে। রাশিয়া বারবার ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের স্থগিতাদেশকে জেলেনস্কির নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করেছে। তবে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট অভ্যন্তরীণভাবে উচ্চ জনমত ধরে রেখেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোসিওলজি পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে, প্রায় ৫৯ শতাংশ ইউক্রেনীয় নাগরিক জেলেনস্কিকে বিশ্বাস করেন, যেখানে প্রায় ৩৪ শতাংশ তাকে বিশ্বাস করেন না।
এই বক্তব্যগুলো ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। জেলেনস্কির পদত্যাগের ইচ্ছা এবং যুদ্ধবিরতির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিবেচনা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেন তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে এবং একই সাথে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতি কেবল ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেই প্রভাবিত করে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব রয়েছে, কারণ ইউক্রেনের অংশীদাররা দেশটির পুনর্গঠন এবং গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতায় সহায়তা করতে আগ্রহী।