চেক প্রজাতন্ত্রের ২০২৫ সালের সংসদীয় নির্বাচনে বিলিওনেয়ার রাজনীতিবিদ আন্দ্রেজ বাবিসের ডানপন্থী জনতাবাদী এএনও (ANO) দল এক নির্ণায়ক বিজয় অর্জন করেছে। দলটি ৩৪.৫% ভোট পেয়ে সংসদের নিম্নকক্ষে ২০০ আসনের মধ্যে ৮০টি আসন নিশ্চিত করেছে, যা বাবিসের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন।
বাবিস সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং সম্ভাব্যভাবে চরম ডানপন্থী ফ্রিডম অ্যান্ড ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি (SPD) (৭.৯% ভোট) এবং ডানপন্থী জনতাবাদী মোটরিস্ট (Motorists) (৬.৭৮% ভোট) দলের সমর্থন চাইতে পারেন। এই সম্ভাব্য জোট ইউক্রেন বিষয়ক দেশটির অবস্থান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এসপিডি (SPD) এবং মোটরিস্ট দলের সাথে জোট হলে ইউক্রেনকে সমর্থন থেকে সরে এসে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো রাশিয়া-পন্থী অবস্থানের দিকে ঝুঁকতে পারে চেক প্রজাতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পূর্ববর্তী মেয়াদে (২০১৭-২০২১) বাবিস হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং প্রায়শই ইইউ-এর মধ্যে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও অভিবাসন নিয়ে একই ধরনের মতামত পোষণ করতেন।
বাবিসের নির্বাচনী প্রচার মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর হ্রাস এবং জ্বালানি মূল্যের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে কেন্দ্রীভূত ছিল, পাশাপাশি তিনি ইইউ-এর গ্রিন ডিল এবং অভিবাসন চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফল চেক প্রজাতন্ত্রের বৈদেশিক নীতি, ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি এবং বৃহত্তর ইইউ লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাবিস নিজেকে "ইউরোপপন্থী এবং ন্যাটো-পন্থী" হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করলেও, তাঁর সম্ভাব্য জোটসঙ্গীরা, বিশেষ করে এসপিডি (SPD), ইইউ এবং ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে। চেক রাষ্ট্রপতি পেত্র পাভেল নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য দলীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৮.৮%।
ইউক্রেনকে আর্টিলারি শেল সরবরাহের লক্ষ্যে পরিচালিত চেক অ্যামুনিশন উদ্যোগও একটি বিতর্কের বিষয়। বাবিস এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি ন্যাটো দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, চেক প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে নয়। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যদিও চেক প্রজাতন্ত্র ইইউ বাজেটের মাধ্যমে ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে, তবে সরাসরি সহায়তা পুনরায় মূল্যায়ন করা হতে পারে, যেখানে চেক নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বৈদেশিক নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজরে এসেছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে চেক প্রজাতন্ত্র ব্রাসেলসের জন্য একটি কঠিন অংশীদার হতে পারে এবং "চেক প্রজাতন্ত্র প্রথমে!" নীতি গ্রহণ করতে পারে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে বাবিস তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং ন্যাটো প্রতিশ্রুতির কারণে একটি বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণ করতে পারেন, যা তাঁকে অরবান এবং ফিকোর মতো নেতাদের থেকে আলাদা করবে। একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন এই সম্ভাব্য নীতি পরিবর্তনের মাত্রা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।