যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন নীতি: বিতর্ক ও উদ্বেগের মধ্যে 'রিমুভাল ফোর্স' গঠনের প্রস্তাব

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি একটি নতুন অভিবাসন নীতির খসড়া ৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো একটি 'রিমুভাল ফোর্স' গঠন করে বছরে ১৫০,০০০ ব্যক্তিকে বহিষ্কার করা। এই পরিকল্পনার জন্য প্রায় ১.৬ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এতে ওয়ারেন্ট ছাড়াই ফেসিয়াল রিকগনিশন (মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ) প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই নীতিটি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক বিতর্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

কনজারভেটিভ পার্টির 'বর্ডার প্ল্যান'-এর অধীনে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নতুন কঠোর নিয়মাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নীতি অনুযায়ী, শুধুমাত্র বিদেশী সরকারের দ্বারা সরাসরি হুমকির সম্মুখীন ব্যক্তিরাই শরণার্থী মর্যাদা পাবেন। যারা যুদ্ধ বা ধর্মীয় বা যৌনতার মতো বিষয়ে কম সহনশীল দেশ থেকে পালিয়ে আসছেন, তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন না। দলটি মনে করে, এই নতুন নিয়মের ফলে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই আশ্রয় লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

এছাড়াও, ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করে সমস্ত সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে কেন্দ্রীভূত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে আপিলের সুযোগ সীমিত থাকবে। অভিবাসন মামলাগুলির জন্য আইনি সহায়তাও বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, কারণ দলটি মনে করে আইনজীবীরা 'ইউকেকে প্রতারিত' করছেন।

প্রস্তাবিত 'রিমুভাল ফোর্স' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এজেন্সির আদলে তৈরি করা হবে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ICE সংস্থাটি অতীতে আইনি অভিবাসী এবং মার্কিন নাগরিক উভয়কেই গ্রেপ্তার করার অভিযোগ এবং জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করার মতো সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই প্রযুক্তি জাতিগত সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশীয়দের মুখমণ্ডল শনাক্তকরণে কম নির্ভুল হতে পারে, যার ফলে ভুল শনাক্তকরণ এবং অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই প্রযুক্তিটি পুলিশি নজরদারি বাড়াতে পারে এবং বৈষম্যমূলক আচরণের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৩ সালে পাসপোর্ট ডেটাবেসে অনুসন্ধানের সংখ্যা ২ থেকে ৪১৭-তে এবং ২০২৪ সালে অভিবাসন ডেটাবেসে ১৬ থেকে ১০২-তে বৃদ্ধি পেয়েছে।

লেবার পার্টি এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা কনজারভেটিভ সরকারের অভিবাসন নীতির ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেছে, 'আমরা সবকিছু ভুল করেছি, আমরা ক্ষমা চাইব না, এখন আমাদের বিশ্বাস করুন'। লেবার পার্টি আরও জানিয়েছে যে কনজারভেটিভ সরকার আশ্রয় হোটেলগুলির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে এবং রুয়ান্ডা পরিকল্পনায় ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ড নষ্ট করেছে। কনজারভেটিভদের অধীনে রেকর্ড সংখ্যক নেট মাইগ্রেশন,

এই নতুন নীতিটি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন এবং মানবাধিকারের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে যেমন সরকার দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার এবং অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, তেমনই অন্যদিকে এই পদক্ষেপগুলি ব্যক্তিগত অধিকার, গোপনীয়তা এবং ন্যায়বিচারের অ্যাক্সেস নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করছে। এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি আগামী দিনে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন এবং নাগরিক অধিকারের আলোচনাকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলে আশা করা যায়।

উৎসসমূহ

  • Daily Mail Online

  • Facial Recognition: Police Use - Hansard - UK Parliament

  • Police: Facial Recognition Technology - Hansard - UK Parliament

  • Facial recognition over-used and under-legislated

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।