সিরিয়া ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি ২১0-আসনের অন্তর্বর্তীকালীন গণপরিষদ গঠনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। এই পরিষদ নতুন নির্বাচন আইন এবং সংবিধান অনুমোদনের দায়িত্বে থাকবে। এটি দেশটির রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর এসেছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রাদেশিক নির্বাচনী কলেজ এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগের মিশ্রণ জড়িত ছিল, যেখানে স্থানীয় উত্তেজনার কারণে কিছু এলাকায় বিলম্ব হয়েছে। নির্বাচনী কলেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৪০টি আসন পূরণ করা হয়েছে, যা জনসংখ্যার ভিত্তিতে বন্টন করা হয়েছে, এবং বাকি ৭০টি আসন অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা কর্তৃক সরাসরি নিযুক্ত হয়েছেন। নতুন সংসদের নতুন সংবিধান এবং নির্বাচনী আইন অনুমোদন করার জন্য ৩০ মাসের মেয়াদ রয়েছে। প্রায় ৭,০০০ নির্বাচনী কলেজ সদস্য ৬০টি জেলায় ১৪০টি আসনের জন্য ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন। তবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং দামেস্কের মধ্যে উত্তেজনার কারণে সোয়েদা প্রদেশে এবং সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা পুনর্গঠন এবং সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়ার জন্য মুলতুবি থাকা আইনগুলির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এবং সকল সিরিয়ার নাগরিকদের সম্মিলিত অবদানের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচন কোনো নিরাপত্তা ঘটনা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে, দেশব্যাপী ৫০টি নির্বাচনী বিভাগ সুরক্ষিত ছিল এবং ৭,০০০ এর বেশি নির্বাচনী কমিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে এটিই প্রথম নির্বাচন যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা বা শাসক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রার্থীর নির্বাচন প্রক্রিয়াটি মুক্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এই নির্বাচনগুলি পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র অর্জন করে না, এবং নির্বাচনী কলেজ ব্যবস্থা সু-সংযুক্ত প্রার্থীদের পক্ষে যেতে পারে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে ক্ষমতাকে সুসংহত করতে পারে। অন্যদিকে, সমর্থকরা এই নির্বাচনকে অগ্রগতির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। তুরস্ক আসাদের পতনের ঘটনাকে "আশার প্রতীক" হিসেবে উদযাপন করেছে, তবে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি যাতে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণকারী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) নতুন সিরিয়ান সেনাবাহিনীতে একীভূত হওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অংশ ছিল। এই চুক্তিটি একটি একক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে সামরিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে একত্রিত করার একটি প্রচেষ্টা।
এই নির্বাচনগুলি সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে চিহ্নিত করে, যা দেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা, পুনর্গঠন এবং সম্ভাব্য গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নতুন আইন প্রণয়নকারী সংস্থা গঠন এবং নতুন আইন ও সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া দেশটির জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে, নির্বাচনী পদ্ধতির স্বচ্ছতা এবং প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে সিরিয়ার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই নির্বাচনগুলি একটি পদ্ধতিগত পদক্ষেপ হলেও, এর প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে পরবর্তী সংস্কারগুলির কার্যকারিতা এবং সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন কতটা হয় তার উপর।