২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ, সুদানের গৃহযুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে এবং দেশটির বেসামরিক জনগণের উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে চলেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (SAF) এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল। এর ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুতর মানবিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৩,৩৮৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যা ২০২৪ সালের মোট বেসামরিক মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এই সংঘাতকে "একটি বিস্মৃত যুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং "নিষ্ঠুর অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ সহ" সংঘটিত হওয়া এই "ভয়াবহ পরিস্থিতির" প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিগত সহিংসতাও এই সংঘাতে একটি উদ্বেগজনক মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে নির্বিচার হামলা এবং প্রতিপক্ষকে "সহযোগিতা" করার অভিযোগে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। বিশেষ করে সুদানের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বেসামরিক স্থাপনাগুলিতে ড্রোন হামলা যুদ্ধের একটি নতুন এবং উদ্বেগজনক মাত্রা যোগ করেছে।
দারফুর এবং দক্ষিণ সুদানের কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে, যা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (WFP) জানিয়েছে যে প্রায় ২৪.৬ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যার মধ্যে ৬৩৭,০০০ মানুষ চরম ক্ষুধার সম্মুখীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। এই কূটনৈতিক জটিলতার মধ্যে, রাশিয়া নভেম্বর ২০২৪-এ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আনা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, যা মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলেছিল।
এই সংঘাতের প্রভাব সুদানের সীমানা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, RSF দক্ষিণ সুদানের প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী, সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট ইন অপোজিশন (SPLM-IO)-কে আক্রমণ করেছে। এই উত্তেজনা দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ সুদানের যুদ্ধরত পক্ষগুলো বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে, যেখানে ৩,৩৮৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের মোট বেসামরিক মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ। এই হতাহতের প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটেছে যখন সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (SAF) এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) কামরা, বিমান হামলা এবং ড্রোন ব্যবহার করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। এপ্রিল মাসে এল ফাশের এবং এর আশেপাশে RSF-এর আক্রমণ কমপক্ষে ৫২৭ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, যার মধ্যে দারফুরের জামজাম এবং আবু শোক উদ্বাস্তু শিবিরে ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ ছিল। মার্চ মাসে, উত্তর দারফুরের তোরা বাজারে SAF-এর বিমান হামলায় ১৩ জন সদস্যের একটি পরিবারের সহ কমপক্ষে ৩৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল। OHCHR আরও উল্লেখ করেছে যে এই বছরের প্রথমার্ধে কমপক্ষে ৯৯০ জন বেসামরিক নাগরিককে সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এই পরিস্থিতিকে "ভয়াবহ" বলে অভিহিত করেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার, অপরাধীদের জবাবদিহি করার এবং দায়মুক্তির চক্র ভাঙার উপর জোর দিয়েছেন।
এই সংঘাতের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যেখানে প্রায় ২৪.৬ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ১৯ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।