ফ্রান্স মালি-র সাথে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী সহযোগিতা স্থগিত করেছে এবং প্যারিসে অবস্থিত মালি-র দূতাবাস ও কনস্যুলেটের দুজন কর্মীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো মালিতে ফরাসি নাগরিক ইয়ান ভেজিলিয়ার-কে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা। মালির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে ভেজিলিয়ার ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তবে ফ্রান্স এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে ভেজিলিয়ার বামাকোতে ফরাসি দূতাবাসের একজন স্বীকৃত সদস্য ছিলেন।
এই ঘটনার জেরে মালিও প্যারিস থেকে পাঁচজন ফরাসি দূতাবাস কর্মীকে বহিষ্কার করেছে। এই ঘটনাটি ফ্রান্স এবং মালির মধ্যে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়। ২০২০ এবং ২০২১ সালে মালিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। মালির বর্তমান সামরিক জান্তা, প্রেসিডেন্ট আসিম গোইতার নেতৃত্বে, ফ্রান্সের প্রভাব থেকে সরে এসে রাশিয়ার সাথে নিরাপত্তা ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। এর আগে, মালির সামরিক সরকার ফ্রান্সের সৈন্য প্রত্যাহার এবং রাশিয়ার কাছ থেকে নিরাপত্তা সহায়তা চাওয়ার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিল।
মালির নিরাপত্তা মন্ত্রী জেনারেল দাওদ আলি মোহাম্মদাইন জানিয়েছেন যে, অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস ডেম্বেলে এবং জেনারেল নেমা সাগারা সহ আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন যে, এই ষড়যন্ত্রের সাথে বিদেশী রাষ্ট্রগুলিরও হাত থাকতে পারে। তবে ফ্রান্স এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে ভেজিলিয়ারের কূটনৈতিক সুরক্ষা ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, ১৮৯২ সাল থেকে ১৯৬0 সাল পর্যন্ত মালি ফরাসি শাসনের অধীনে ছিল। স্বাধীনতার পর, ফ্রান্স মালির একটি প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে থেকেছে এবং সামরিক সহায়তারও প্রদান করেছে। কিন্তু ২০২০ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে এই সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। মালির সামরিক সরকার তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে ফ্রান্সের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করছে। এই পরিস্থিতি সাহেল অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে রাশিয়া তার প্রভাব বিস্তার করছে।