নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালীন জি৭ (G7) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার দ্বারা ন্যাটোর (NATO) আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে, তারা ইউক্রেনের "শক্তিশালী, স্বাধীন ও সমৃদ্ধ" রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার প্রতি তাদের অবিচল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ১৯টি রুশ যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, যার মধ্যে অনেকগুলো বেলারুশ থেকে এসেছিল। এই বিমানগুলোকে ন্যাটো যুদ্ধবিমান বাধা দেয়। ১৩ সেপ্টেম্বর, বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ডের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছাকাছি রাশিয়ার মিগ-৩১ (MiG-31) বিমানগুলো ট্রান্সপন্ডার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় প্রবেশ করলে ন্যাটো যুদ্ধবিমানকে পাঠানো হয়। একই দিনে, রোমানিয়ার আকাশসীমাও একটি রুশ বিমান লঙ্ঘন করে। ১৯ সেপ্টেম্বর, এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় তিনটি রুশ মিগ-৩১ বিমান ১২ মিনিট ধরে অবস্থান করে, যার প্রতিক্রিয়ায় এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে বিমানগুলো বাল্টিক সাগরের নিরপেক্ষ জলসীমার উপর দিয়ে উড়েছিল।
এই ঘটনাগুলো ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে এই লঙ্ঘনগুলোকে "বেপরোয়া" এবং "উস্কানিমূলক" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে রাশিয়া যেন কোনোভাবেই এর পুনরাবৃত্তি না করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ন্যাটো তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আকাশসীমা রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সকল প্রয়োজনীয় সামরিক ও অসামরিক উপায় ব্যবহার করতে প্রস্তুত। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তাদের ভূখণ্ডে কোনো অননুমোদিত বস্তু প্রবেশ করলে তা আলোচনা ছাড়াই ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জি৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে রাশিয়ার সহায়তাকারী তৃতীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা ইউক্রেনকে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি প্রদানের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছেন। এই নিরাপত্তা গ্যারান্টিগুলো ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে যেকোনো আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার এই ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন কেবল আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে না, বরং এটি ন্যাটোর সংহতি এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে পরীক্ষার একটি কৌশলও বটে। এই ঘটনাগুলো ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরক্ষা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। জি৭ দেশগুলোর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থনকেই নির্দেশ করে, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।