গত ২ অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যায় জার্মানির মিউনিখ বিমানবন্দরে ড্রোন দেখার ঘটনায় বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এই ঘটনায় প্রায় ৩,০০০ যাত্রী প্রভাবিত হয়েছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জুড়ে ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে রাত ১০টা ১৮ মিনিটে, যখন প্রথম ড্রোন দেখার খবর আসে। প্রথমে ফ্লাইট চলাচল সীমিত করা হলেও পরে সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়। ১৭টি ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং ১৫টি আগত ফ্লাইট স্টুটগার্ট, নুরেমবার্গ, ভিয়েনা এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য ক্যাম্প বেড, কম্বল এবং খাবারের ব্যবস্থা করে। বিমান চলাচল ৩ অক্টোবর সকালে পুনরায় শুরু হয়।
এই ঘটনাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশের পর। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রাশিয়া এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউরোপীয় দেশগুলোর ড্রোন সংক্রান্ত অভিযোগকে উপহাস করেছেন এবং বলেছেন যে রাশিয়া ফ্রান্স বা ডেনমার্কের মতো দেশে ড্রোন পাঠাবে না এবং রাশিয়ার কাছে এমন ড্রোন নেই যা লিসবনে পৌঁছাতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন ইউরোপের পূর্ব সীমান্ত রক্ষার জন্য একটি 'ড্রোন প্রাচীর' (drone wall) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই 'ড্রোন প্রাচীর' উন্নত সনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে, যারা মনে করে যে এটি আরও জটিল এবং এর জন্য আরও উন্নত ব্যবস্থার প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সময়ে, ডেনমার্ক এবং নরওয়ের বিমানবন্দরগুলোতেও একই ধরনের ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে, যা ইউরোপীয় বিমান চলাচলের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই ঘটনাগুলো ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের আকাশসীমা সুরক্ষার জন্য আরও শক্তিশালী এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করেছে। এই সমন্বিত প্রচেষ্টা আগামী দিনে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জার্মানির ফেডারেল এবং রাজ্য পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে জড়িত, তবে এখন পর্যন্ত ড্রোনগুলির উদ্দেশ্য বা এর জন্য কে দায়ী তা নির্ধারণ করা যায়নি।