জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) অনুযায়ী পূর্বে প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা শিথিলতা প্রত্যাহার করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত এক ভোটাভুটিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে ইরানের উপর পূর্বের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা রেজোলিউশনগুলির স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাবর্তন (snapback) স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলতা অব্যাহত রাখার জন্য অন্তত নয়টি ভোটের প্রয়োজন ছিল। তবে, ভোটে নয় সদস্য প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, চার সদস্য পক্ষে এবং দুজন ভোটদানে বিরত থাকে। এর ফলে, ৩০ দিনের একটি সময়সীমা শেষে পূর্বের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা রেজোলিউশনগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হয়। এর মধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, অস্ত্র, অর্থায়ন এবং শিপিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য) ইরানকে JCPOA-এর শর্তাবলী লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। তাদের মতে, ইরান উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বৃদ্ধি করেছে, পারমাণবিক-সমৃদ্ধকরণ পরিকাঠামো সম্প্রসারিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সাথে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে না। অন্যদিকে, ইরান ইউরোপীয় দেশগুলির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছে এবং দাবি করেছে যে তারা একটি 'যুক্তিসঙ্গত ও কার্যকর পরিকল্পনা' উপস্থাপন করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে, বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে। অতীতে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বিমান হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতি ও জনগণের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। ২০১২ সাল থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও তীব্র হয়েছে, যা ইরানের রপ্তানিকে প্রায় ৩৩ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এবং দেশটির বাণিজ্যের প্রায় ১০৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতকে লক্ষ্য করে, যা তাদের পারমাণবিক ও সামরিক কর্মসূচির অর্থায়ন ব্যাহত করে। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক জটিলতার একটি চিত্র তুলে ধরে।