কয়েক দিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ZNPP) ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে পুনরায় সংযুক্ত হয়েছে। এই ঘটনাটি পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ZNPP বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যা এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাশিয়ান অপারেটর জানিয়েছে যে প্ল্যান্টটি রিজার্ভ ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছিল এবং তাদের কাছে ২০ দিনের স্বায়ত্তশাসিত অপারেশনের জন্য পর্যাপ্ত ডিজেল জ্বালানী মজুদ ছিল। তবে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এই পরিস্থিতিকে "অত্যন্ত উদ্বেগজনক" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হারানো পারমাণবিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ZNPP-এর ভৌত অখণ্ডতা বেশ কয়েকবার আপোস করা হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।
এই বিচ্ছিন্নতার সময়, ZNPP তার ১৮টি জরুরি জেনারেটরের মধ্যে ৭টি ব্যবহার করছিল। যদি এই জেনারেটরগুলি কাজ করা বন্ধ করে দিত, তবে চুল্লির পারমাণবিক জ্বালানী অনিয়ন্ত্রিতভাবে উত্তপ্ত হতে শুরু করত এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সক্রিয় চুল্লিগুলির গলন (meltdown) ঘটার আশঙ্কা ছিল। গ্রিনপিস ইউক্রেনের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে রাশিয়ার দখলদারিত্ব "একটি নতুন গুরুতর এবং সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পর্যায়ে" প্রবেশ করেছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মনে করেন যে রাশিয়া এই পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে একটি দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গ্রিনপিসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে রাশিয়া একটি নতুন পাওয়ার লাইন তৈরি করছে যা প্ল্যান্টটিকে রাশিয়ান গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করবে, যা প্ল্যান্টটিকে পুনরায় চালু করার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পরিচালনা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ZNPP-এর ইতিহাসে এটি নবম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোতে আঘাত হেনেছে। তবে, এইবারের ঘটনাটি দীর্ঘতম এবং এটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। IAEA-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা যায়নি। এই পরিস্থিতি ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য একটি বড় নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।