গাজার বেসামরিক জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার উপর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বাধা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ৪৪টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণে এই বৃহৎ বেসামরিক উদ্যোগটি গাজার উপর আরোপিত অবরোধ ভাঙার এবং সেখানে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা করছিল। ফ্লোটিলাটি ২০২৫ সালের ৩০শে আগস্ট বার্সেলোনা থেকে এবং ৭ই সেপ্টেম্বর টুনিস ও সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করে। ফ্লোটিলার ৪০টিরও বেশি জাহাজকে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেয়। এই ঘটনায় প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী, যাদের মধ্যে ডাক্তার, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী এবং মানবাধিকার কর্মী রয়েছেন, তাদের আটক করা হয় ।
২০২৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে ফ্লোটিলার কিছু সদস্য উত্তর আফ্রিকায় হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছিল। তবে, ফ্লোটিলার আয়োজকরা তাদের মিশনকে সম্পূর্ণ অহিংস ও মানবিক বলে দাবি করেছেন এবং এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে তাদের উদ্দেশ্য কেবল গাজার জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করা এবং অবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো।
এই ঘটনার পর, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, পাকিস্তান, কাতার, ওমান, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন এবং থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত ১৬ই সেপ্টেম্বর একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিগুলির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই যৌথ বিবৃতিটি গাজার মানবিক সংকট এবং সেখানে ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
গাজার উপর ইসরায়েলের অবরোধ দীর্ঘকাল ধরে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজা শহরের প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু, অনাহারে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অবরোধের ফলে গাজার জিডিপি ৫০% হ্রাস পেয়েছে এবং বেকারত্বের হার ৪৩% ছাড়িয়ে গেছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। প্রায় ৮০% জনসংখ্যা আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মতো উদ্যোগগুলি সরাসরি জনগণের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফ্লোটিলার উপর এই বাধা এবং আটক ঘটনাটি গাজার মানবিক সংকট, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন এবং বেসামরিক উদ্যোগের উপর সরকারি হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলিকে সামনে এনেছে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং গাজার অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
গাজা অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে, যা ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। যদিও কিছু প্রাথমিক প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল, ২০১০ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়শই জাহাজগুলিকে বাধা দিয়েছে বা আক্রমণ করেছে। সর্বশেষ ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের মে মাসে ড্রোন হামলা এবং ২০২৫ সালের জুন ও জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেওয়া, যা এই অঞ্চলে চলমান উত্তেজনাকে তুলে ধরে।