বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ তারিখে ২৫ জন ব্যক্তিকে "চরমপন্থী অপরাধে" দণ্ডিত করার পর ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকদিন আগে, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫ তারিখে, ৫২ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
যদিও এই মুক্তিকে কেউ কেউ ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলি জানাচ্ছে যে এখনও ১,০০০ জনেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে রয়েছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত ২৫ জনের মধ্যে ১২ জন মহিলা এবং ১৩ জন পুরুষ ছিলেন, যাদের বেশিরভাগের বয়স ৪০ বছরের নিচে। এদের মধ্যে অনেকের সন্তান রয়েছে এবং একজন দণ্ডিত ব্যক্তি নাবালক অবস্থায় অপরাধ করেছিলেন। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বেল্টা (BelTA) অনুসারে, ক্ষমা প্রাপ্ত সকলেই তাদের দোষ স্বীকার করেছেন, অনুতাপ প্রকাশ করেছেন এবং আইন মেনে জীবনযাপনের অঙ্গীকার করেছেন।
এই ক্ষমাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক মুক্তির অংশ। এর আগে, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫ তারিখে, মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার পর বেলারুশ ৫২ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়, যার মধ্যে ১৪ জন বিদেশী নাগরিকও ছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বেলভিয়া (Belavia)-র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে এবং মিনস্কে তাদের দূতাবাস পুনরায় খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা ভিয়াসনা (Viasna)-র মতে, বেলারুশে এখনও প্রায় ১,৩০০ জন রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি আরও জানিয়েছে যে ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকে প্রায় ৮,৫১৯ জন মানুষ রাজনৈতিক কারণে ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হয়েছেন এবং ১ লক্ষেরও বেশি দমন-পীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি বেলারুশের কর্তৃপক্ষের উপর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাধ্যবাধকতা এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে।
এই মুক্তিগুলির সময়টি বেলারুশের জাতীয় ঐক্য দিবস উদযাপনের সাথে মিলে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিনস্ককে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ঘটনাগুলি ঘটছে। লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিটানাস নাওসেদা (Gitanas Nausėda) মুক্তিপ্রাপ্তদের "বেড়ার তার, বন্ধ জানালা এবং নিরন্তর ভয় থেকে মুক্তি" পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেলারুশের কর্তৃপক্ষকে সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে এবং মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক নীতিগুলি সমুন্নত রাখতে আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের এই প্রচেষ্টাগুলি বেলারুশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে সম্ভাব্য পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়। তবে, মানবাধিকার সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুসারে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক বন্দীর অব্যাহত কারাবাস এই পদক্ষেপগুলির উপর একটি ছায়া ফেলেছে, যা বেলারুশে প্রকৃত সংস্কার এবং মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি অঙ্গীকারের মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।